নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার অনুরোধের বিষয়ে এই মুহূর্তে ভারতের নতুন করে কিছু বলার নেই বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। শুক্রবার বিকেলে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এটাও পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন যে ভারত সরকার এ নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাইছে না।
হাসিনাকে প্রত্যর্পণে বাংলাদেশের অনুরোধের বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে কি-না, জানতে চাইলে জয়সওয়াল বলেন, ‘এর আগে আমি নিশ্চিত করেছিলাম যে আমরা শেখ হাসিনার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বার্তা পেয়েছি। এর বাইরে, এই মুহূর্তে আমার আর কিছু যোগ করার নেই।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তিনি সেখানেই রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যা মামলা হয়েছে। এমনকি গণহত্যার মামলাও রয়েছে। এ জন্য বিচার প্রক্রিয়ার স্বার্থে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফেরত চেয়ে ২৩ ডিসেম্বর ভারতকে কূটনৈতিক নোট পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই দিনই নোট পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ভারতের পররাষ্ট্র দফতর।
এদিকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর চিন্ময় দাসের জামিন না পাওয়ার প্রসঙ্গে রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি। বাংলাদেশে যে ধরনের কর্মকাণ্ড চলছে, সেখানে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের সুষ্ঠু বিচারের সুযোগ দেওয়া উচিত। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এদিন আরও কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন। সেগুলো ছিল :
তুরস্ক থেকে বাংলাদেশের ‘লাইট ট্যাংক’ কেনার গুঞ্জন প্রসঙ্গে
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এদিন এক সাংবাদিক বিভিন্ন গুঞ্জনের সূত্র ধরে জানতে চান, ‘‘তুরস্কের কোম্পানি ‘অটোকার’-এর কাছ থেকে বাংলাদেশ তাদের সেনাবাহিনীর জন্য ২৬টি লাইট ট্যাংক বা ‘হালকা সাঁজোয়া গাড়ি’ কেনার জন্য কথাবার্তা চালাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। আঞ্চলিক নিরাপত্তার দৃষ্টিতে ভারত এই সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখছে?’’
জবাবে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের পরই প্রেস বিবৃতির আকারে এই মনোভাব স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে ভারত একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল, ইনক্লুসিভ বাংলাদেশকে সমর্থন করে। এটাও বলা হয়েছে যে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক গড়তে চাই, যা হতে হবে পারস্পরিক আস্থা, মর্যাদা, স্বার্থ ও একে অপরের উদ্বেগগুলো নিয়ে সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে।’
‘তো এটাই হলো বাংলাদেশ সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। আপনি যে বিষয়ে জানতে চাইছেন, তা নিয়েও আমাদের একই দৃষ্টিভঙ্গি হবে। তা ছাড়া আপনি জানেন, আমাদের নেইবারহুডে প্রতিটি নিরাপত্তাগত ইস্যুতে আমরা সতর্ক নজর রাখি ও যথাযথ পদক্ষেপ নিই, এখানেও তাই করা হবে’, বলেন রণধীর জয়সওয়াল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রসঙ্গে
গত ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতৃত্ব ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ জারি করা হবে বলে প্রথমে জানিয়েছিল, যাতে ‘৭২-র সংবিধানের কবর রচিত হবে বলেও কোনও কোনও নেতা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সাংবাদিকরা জানতে চান, ভারত কি এই পদক্ষেপকে বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানকে হেয় করার চেষ্টা হিসেবে দেখছে?
জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবারও আগের কথারই পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ‘ভারত মনে করে দু’দেশের মানুষরাই হলেন দু’দেশের সম্পর্কের আসল ‘স্টেকহোল্ডার’ বা অংশীজন! এটাই বাংলাদেশ সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। ওখানে নানা ধরনের ঘটনা বা ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু ঘটনা ঘটছে। কিন্তু তাদের সম্পর্কে আমাদের ‘জেনেরিক অ্যাপ্রোচ’ বা সাধারণভাবে দৃষ্টিভঙ্গি ওটাই!’
‘বাংলাদেশিদের’ ভারতের পাসপোর্ট পাওয়া প্রসঙ্গে
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘সম্প্রতি ভারতের নানা প্রান্তে এমন বহু অভিযোগ পাওয়া গেছে যে অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে (বাংলাদেশি নাগরিকদের কথা ইঙ্গিত করে) বিদেশি নাগরিকরা ভারতের পাসপোর্ট হাতে পেয়ে গেছেন এবং তারা পুলিশের হাতে ধরার পড়ার পর সেটি জানা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এটা বন্ধ করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দিয়েছে। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?
মুখপাত্র বলেন, ‘একটা জিনিস খুব স্পষ্ট- ভারতীয় পাসপোর্ট শুধু ভারতীয় নাগরিকদের জন্যই। কিন্তু এই নিয়মের কোথাও যদি কোনো ব্যত্যয় হয় এবং আমরা সেটি জানতে পারি, তাহলে সরকারের এজেন্সিগুলো দ্রুত তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নেবে এবং আইনি পদক্ষেপ করবে।’
‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ বিরুদ্ধে অভিযান ও তাদের ডিপোর্টেশন প্রসঙ্গে
কথিত ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ বিরুদ্ধে ব্যাপক পুলিশি অভিযান প্রসঙ্গে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আপনি অবৈধ অভিবাসীদের ডিপোর্টেশন নিয়ে জানতে চেয়েছেন… দেখুন, আমাদের দেশে নিয়ম ও আইন মোতাবেক বহু (বিদেশি) আসা-যাওয়া করেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু নিয়ম আর আইন ভেঙে কেউ যদি ভারতে আসেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা তো নিতেই হবে। ফলে আপনার প্রশ্নের জবাব খুব সহজ- আমাদের সেনা বা সীমান্তরক্ষীরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং তারা নিজেদের কর্তব্য করে যাবেন!’
Leave a Reply