সময় সংবাদ ডেস্ক : ঈদের পর রাজধানীর কাঁচাবাজারে কিছু পণ্যের দাম বাড়লেও মুরগি ও ডিমের দামে স্বস্তি দেখা গেছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকার নিচে নেমে এসেছে, তেমনি ডিমের দামেও বিরাজ করছে স্থিরতা। ঈদ-পরবর্তী বাজারে মাছের দাম যখন বাড়তির দিকে, তখন মুরগির মাংসের দামে সাধারণ ভোক্তাদের জন্য যেন কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা-বনশ্রী এলাকার বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছের সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে চাহিদা কম থাকায় সব ধরনের মুরগির মাংসের দাম তুলনামূলক কমেছে। এদিকে মুরগির দাম সাধারণ মানুষের কিছুটা নাগালে আসায় কিছুটা স্বস্তির দেখা মিলেছে। বিশেষ করে মাছ কিনতে এসে অনেকেই এখন মুরগি কিনে ফিরছেন। ভোক্তারা আশা করছেন, বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং নজরদারি থাকলে এই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে।
বিক্রেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। ঈদের আগে এই মুরগির দাম ছিল ২২০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত। সোনালি মুরগির কেজি এখন ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০০ টাকার ওপরে।
এদিকে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজিতে। যদিও ঈদের আগে এই দাম ৮০০ টাকার ওপরে উঠেছিল। খাসির মাংসের দাম এখনো ১১০০ টাকা কেজির নিচে নামেনি। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আজকের বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় এ দাম কয়েক সপ্তাহ ধরেই স্থির রয়েছে। ফলে অনেকেই মাংস না কিনে বিকল্প হিসেবে মুরগি বা ডিম বেছে নিচ্ছেন।
এদিকে মুরগির দামে স্বস্তি মিলায় ক্রেতারা বলছেন, মাছ ও অন্যান্য প্রোটিনের চড়া দামে মুরগিই এখন একমাত্র ভরসা। রামপুরা বাজারে বাজার করতে আসা গৃহিণী শিউলি বেগম বলেন, পাবদা মাছের কেজি ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০-৮০০—সেখানে ১৯০ টাকায় মুরগি পাওয়া মানেই বাঁচা গেল! তাই মাছের জায়গায় মুরগি কিনে ফেললাম।
ঈদের পরে বাজারে প্রায় সব ধরনের মাছের দাম বেড়ে গেছে। যেকারণে মাছ খাওয়া এখন অনেকটা বিলাসিতা হয়ে গেছে। তবে আজ বাজারে এসে দেখলাম ব্রয়লারের দাম কম, ডিমও আগের মতোই। অন্তত এটুকু কিনে পরিবারে প্রোটিন নিশ্চিত করা যাচ্ছে।
এদিকে দাম তুলনামূলক কম থাকায় বিক্রি ভালো হওয়ায় খুশি মুরগি-ডিমের বিক্রেতারা। রামপুরা বাজারের ডিম বিক্রেতা রাসেল মিয়া বলেন, ডিমের বাজারে আগে শক্তিশালী একটা সিন্ডিকেট ছিল, এখন সেটা অনেকটাই ভেঙে গেছে। যেকারণে ডিমের দাম বাড়েনি। ডিম এখন মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য কেনা সবচেয়ে সহজ।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সবজির বাড়তি দামের এমন চিত্র দেখা গেছে।
রমজান মাস জুড়ে সব ধরনের সবজির দাম তুলনামূলক কম থাকলেও ঈদের পর থেকে হঠাৎ করেই চড়া হলো সবজির বাজার। বিক্রেতারা বলছেন, বেশিরভাগ সবজির মৌসুম শেষ, আবার কিছু কিছু কেবল উঠতে শুরু করেছে যে কারণে দাম কিছুটা বেশি। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।
বাজারে প্রতি কেজি ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, পটল ৮০ টাকা, করলা কেজি ৮০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৩০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি কেজি ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৯০ টাকা, পেঁপে ও শিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৮০ টাকা, শসা কেজি ৬০ এবং সজিনা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের আগে পুরো রমজান মাস জুড়েই সব ধরনের সবজি কিনেছি কম দামে। কিন্তু ঈদের পর থেকে হঠাৎ করে সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। বেশিরভাগ সবজি এখন প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কিছু কিছু সবজি আবার ১০০ টাকাও কেজি রয়েছে। সব মিলিয়ে সবজির দাম বর্তমানে বাড়তি।
রমজান মাসজুড়ে সব ধরনের সবজির দাম তুলনামূলক কম থাকলেও ঈদের পর থেকে হঠাৎ করেই চড়া হলো সবজির বাজার। বিক্রেতারা বলছেন, বেশির ভাগ সবজির মৌসুম শেষ, আবার কিছু কিছু কেবল উঠতে শুরু করেছে যে কারণে দাম কিছুটা বেশি। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।
রমজান মাসজুড়ে সবজির দাম কম থাকলেও ঢেঁড়স, পটোল, করলা এ ধরনের সবজির দাম বেশি ছিল। তবে এখন এগুলো সবজির দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমে এসেছে। মূলত শীতকালীন সবজির মৌসুম শেষ হয়ে গেছে ফলে ওই সব সবজির সরবরাহ বাজারে তুলনামূলক অনেক কম। এ ছাড়া কিছু কিছু সবজির মৌসুম কেবল শুরু করছে। পরিপূর্ণভাবে এসব সবজি বাজারে আসতে শুরু করলে এগুলোর দামও কমে যাবে। মূলত ঈদের সময় বাজারে সবজি সরবরাহের গ্যাপ সৃষ্টি হয়, সে কারণেই সবজির দাম কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে।
Leave a Reply