নিউজ ডেস্ক,সময় সংবাদ: চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য তারেক রহমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। আবারও আমরা বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তরুণ প্রজন্মের ভাইয়েরা ও দেশবাসী, আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করুন। কারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, কারা প্রতিনিধি হবে, সেটা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়ে আপনারা নির্বাচিত করুন।
আজ বুধবার (২৮ মে) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন
বিএনপি কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা জনগণের কাছে যান। তাদের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করুন। তাদের প্রত্যাশা বোঝার চেষ্টা করুন। জনগণের মন জয় করুন। কারণ জনগণই বিএনপির সব রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পুঁজি। তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, পরামর্শ থাকবে—জনগণণের আস্থা বিশ্বাস ও ভালোবাসা নষ্ট হয় এমন কোনো পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া ঠিক হবে না। সরকারকে বলতে চাই, গণতন্ত্রকামী জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চান, সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন, নির্বাচন করুন। যদি ভবিষ্যতে নির্বাচনে জনগণের রায় পান, তাহলে আবার সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করুন।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘গত দেড় দশকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোটার নতুন তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এই নতুন ভোটারা আজ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার সুযোগ পায়নি। পতিত স্বৈরশাসকের কাছে মানুষের ভোটাধিকারে কোনো মূল্য ছিল না। সুতরাং সংস্কারের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান প্রস্ততি নেওয়া উচিত বলে মনে করি। তিন মাসের মধ্য সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন করা হয়েছে। অতীতে রেকর্ড রয়েছে তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। ১০ মাস পার হয়ে গেল অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না। আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার অতি দ্রুত দেখতে চাই।’
তারুণদের উদ্দেশে তারেক রহমান আরও বলেন, ‘প্রিয় বাংলাদেশ, আমার সামনে উপস্থিত তারুণ সমাজ। আপনারাই বদলে দিতে পারেন আগামীর বাংলাদেশ। প্রবীণদের পারমর্শ আর তারুণের শক্তিতে নির্মিত হবে ৭১ থেকে ২৪ পর্যন্ত লাখো শহীদের আকাঙ্ক্ষার প্রত্যাশিত সেই বাংলাদেশ।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘নারী কিংবা পুরুষ, তরুণ জনগোষ্ঠী দেশের উন্নয়ন এবং অর্থনীতির প্রাণশক্তি। তারুণ্য আর নারী শক্তিকে পরিকল্পনার বাইরে রেখে কখনো একটি রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারে না। তারুণ জনগোষ্ঠীকে প্রধান্য দিয়ে তরুণ জনগোষ্ঠীর আশা আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে বিএনপি আগামী দিনে সব কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। তারুণ সমাজের কাছে বিএনপির পরিকল্পনা তুলে ধরা হচ্ছে। বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগেরদিন ভিন্নমতের মানুষদের নিয়ে সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। তারা তুলে ধরেছেন, কীভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। আজ সর্বশেষ ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘গ্লোবালাইজেশনের যুগে, আজকে মানুষের আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন সম্ভাবনার সব দ্বার উন্মুক্ত। এই সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে। আর কথা বলার রাজনীতি নয়। বিএনপির আগামী দিনের রাজনীতি কর্মসংস্থান সৃষ্টির রাজনীতি। আর কথা বলার রাজনীতি নয়, এখন বাস্তবায়ন ও দৃষ্টান্ত স্থাপনের রাজনীতি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘যদি জনবহুল বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে পারি, তাহলে এই জনশক্তিই হবে উন্নয়নের সবচেয়ে বড় নিয়ামক। তাই জনশক্তিকে কর্মক্ষম জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে আমরা কয়েকটি অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছি। জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন, নারী পুরুষ সবার জন্য নৈতিক মূল্যবোধ কর্মসূচি, কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা, গ্রামীণ উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিকাশ। দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দেওয়া, জনশক্তি রপ্তানি, তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি—কয়েকটি বিষয় অগ্রাধিকার তালিকায় রেখে একটি জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। বিএনপি এটা নিয়ে কাজ করছে।’
তারকে রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায় চার কোটি পরিবার রয়েছে। এই পরিবারগুলোর মধ্যে থেকে ৫০ লাখ গ্রামীণ পারিবার থেকে আমরা ফ্যামেলি কার্ড পরিবেশেনের পারিকল্পনা করছি। প্রান্তিক পরিবারে মা ও বাবার নামে এই কার্ডটি ইস্যু করা হবে। এই পরিবারগুলোকে প্রতি মাসে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তার আওতায় আনা হবে। আমরা আশা করি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর মাধ্যমে পরিবারগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। কৃষকদের নামে ফার্মার্স কার্ড প্রধান করার একটা অন্যতম পরিকল্পনা রয়েছে। এই কার্ডে জামির দাগ নম্বর ও জমির পরিমাণ সব উল্লেখ থাকবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘জনগণের ভোটে সরকার পরিচালনা করার দায়িত্ব পেলে প্রতিটি সেক্টর নিয়ে শুরু থেকেই কাজ করবে বিএনপি। শুধু তাই নয়, আমরা তারুণ প্রজন্মকে নৈতিক শিক্ষা, কারিগরি দিক দিয়ে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’ এ ছাড়া খেলাধুলাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলা ভাষার পাশাপাশি আরও তিন-চারটি ভাষা শেখানোর জন্য প্রয়োজনে শিক্ষক নিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছেন। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম নিয়ে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববাজারে কীভাবে প্রবেশ করা যায়, এ নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। নিরাপধ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা নিয়ে কাজ করব। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সহজে বাহির থেকে লেনদেন করতে পেপালের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিএনপি স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। প্রতিটি গ্রামে হেলথ কেয়ার করা হবে। এর মধ্যে ৮০ ভাগ নারী থাকবে। এর মধ্যে দিয়ে ২ থেকে ৩ বছরে প্রায় ১০০ ভাগ মানুষকে কর্মমুখী করা যাবে।’ এ সময় জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রভাব মোকাবিলায় বিএনপির পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশ ও মানুষের উন্নয়নে পর্যায়ক্রমিকভাবে দলের গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তায়ন করবে। যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে একটি নির্বাচিত ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রয়োজন। কিন্তু আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে। কথিত স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। এর মধ্যে জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে ও বাহিরে কারও কারও মনে হয় ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।’
তারেক রহমান আরও বলেন, এরই মধ্যে জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে সংস্কার নিয়ে সময় ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্ভুক্তি সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কারো কোনো ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। পলাতক স্বৈরাচারের সময় আমরা দেখেছি তারা কীভাবে আদালতকে অবজ্ঞা করেছে এবং আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করেছে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, পলাতক স্বৈরাচারের পর এই সরকারের কাছে দেশের মানুষ আশা করেছিল আইনের প্রতি সম্মান থাকবে। আমরা দেখেছি, আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে যারা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছে, সেই স্বৈরাচারের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখছি।
সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, যারা আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করে, তাদের কাছ থেকে আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি? পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে ব্যক্তির মানসিকতার সংস্কার অনেক বেশি জরুরি। নর্থ কোরিয়ার সংবিধানে লেখা রয়েছে ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব নর্থ কোরিয়া। সুতরাং কী লেখা আছে তার চেয়ে বেশি জরুরি, মেনে চলা। ইশরাকের ক্ষমতা গ্রহণ বা শপথ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে আমরা আবারও স্বৈরাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি।
বক্তব্য শেষে তিনি দেশবাসীর জন্য একটি স্লোগান তুলে ধরেন। স্লোগানটি হচ্ছে— ‘দিল্লি নয়, দিল্লি না; নয় অন্য কোনো দেশ; সবার আগে বাংলাদেশ।
জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান এবং ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের সঞ্চালনায় তারুণ্যের সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
Leave a Reply