সময়সংবাদ ডেস্ক :
আসুন জেনে নেই অবসর প্রাপ্ত এর অর্থসপ্রসারণ কি?!
অবসর, অর্থ একজন ব্যক্তির অবস্থান বা পেশা থেকে তার সক্রিয় কর্মময় জীবন থেকে নিষ্ক্রিয় করা বা অব্যাহতি দেয়া।
বয়স্ক হয়েগেলে বা স্বাস্থ্যগত কারণে একজন ব্যক্তিকে অবসর দেয়া হয়। অথবা কেউ যখন ব্যক্তিগত বা সরকারী পেনশন সুবিধার জন্য যোগ্য হয় তখনও অবসর প্রাপ্ত হতে পারে। যদিও কর্মরতদের অবস্থান সম্পর্কিত আইনের ফলে বেশিরভাগ দেশে অবসর গ্রহণে যেতে হয়।
অবসরের ধারণাটি ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে প্রবর্তিত হয়েছিল। ১৮ শতাব্দীতে মানুষ গড়ে ২৬-৪০ বছর জীবনকাল পেতো। তাই কম আয়ু , সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এবং পেনশন ব্যবস্থার অনুপস্থিতির কারণে বেশিরভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মৃত্যুবরণ না করা পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে হতো।
১৮৮৯ ইং সালে জার্মানি সর্ব প্রথম অবসর সুবিধা চালু করে।
বর্তমানে বেশিরভাগ উন্নত দেশগুলিতে বৃদ্ধ বয়সে অবসরে পেনশন দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যা নিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠা বা রাষ্ট্র দ্বারা অর্থায়ন করা হয়। অনেক দরিদ্র দেশে বয়স্কদের জন্য কোনো সহায়তার ব্যাবস্থা নেই। কিন্তু বর্তমানে, পেনশন সহ অবসর নেওয়া কর্মীদের অধিকার হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে এটা অধিকার কিনা সেটা নিয়ে কঠোর আদর্শিক ও রাজনৈতিক লড়াই হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর জাতীয় সংবিধানে অবসর একটি অধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়।
যাইহোক মূল কথায় আসাযাক, আমরা বরাবরই দেখছি হঠাৎ কোননা কোন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দেয়া হচ্ছে! যারা আসলে ওই চেয়ারের দায়দায়িত্ব বহনে শারীরিক ও মানসিক ভাবে আধা-যোগ্য বা অ-যোগ্য!
প্রশ্ন হচ্ছে, যদি তারা আধা-যোগ্য বা অ-যোগ্য হয় তাহলে তাদের দাপ্তরিক কাজগুলো কি ভাবে সম্পূর্ণ করছেন?! বয়সের ভারে ক্লান্ত হওয়ার কারণে তার অসমাপ্ত দাপ্তরিক কাজগুলো তাহলে কে বা কারা করছেন?! তাদের কি তাহলে কোনো অলৌকিক ক্ষমতা আছে?!
আরে না ভাই, ঐযে আগেই বলেছি তাদের অবসরের আগে দলীয় সমর্থন প্রকাশ করেন! এবং নিজহাতে ও নিজ চরিত্রের কিছু চেলা বা সাগরেদ (একান্ত সহকারী, উপ ও অতিরিক্ত) তৈরি করে রেখে যান!
খুব ভালোকরে পর্যবেক্ষণ করলে দেখাযায় অবসর প্রাপ্ত সাহেবের নতুন পদে যোগদানের পর তার অফিসিয়াল অসমাপ্ত কাজগুলো হয় তাদের সহকারী করছেন নাহয় তার অধীনস্থ কেউ না কেউ গোঁজামিল দিয়ে সম্পূর্ণ করছেন!
যার ফলশ্রুতিতে ওই সকল সেক্টরগুলোতে নবীন – প্রবীণ আমলাদের মধ্যে কাজের ও মতের অমিল মারাত্বক আকারে দেখা দেয়। সেইসাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোতে জনগণের সমস্যা সমাধানের চেয়ে ভোগান্তি বেড়ে যায় অনেকগুণ বেশি।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আধাযোগ্য বা অযোগ্য ব্যক্তিদের অলসতার কারণে রাষ্ট্র পরিচালনাকারী প্রধানগণকে (মন্ত্রী/উপদেষ্টা) চরম বিপাকে পরতে হয় বার বার এবং আমরা বার বার ফিরেযাই নতুনকরে রাষ্ট্র গঠনের পথে অথবা ভবিষ্যৎ ধ্বংসের পথে! অথচ, উনারা যে কোনো সরকার আমলে থাকেন বহাল তবিয়তে!
আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে,যে কারণে রাষ্ট্রের সবথেকে দামী সম্পদ, আমাদের তরুণ প্রজন্মের এবং তরুণ সমাজের বুকের রক্ত ঝরছে বার বার সেইসাথে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং দিক ও উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও সুনির্দিষ্ট পথ।
দুর্ভাগ্যবশত, বিগত কয়েক যুগ ধরে আমরা দেখে আসছি, কিছু কুটবুদ্ধি সম্পূর্ণ আমলা এবং রাজনৈতিক প্রবীণগণ আমাদের তরুণদের ব্যবহার করছেন বিশেষ করে নিজেদের অবস্থান আরো উপরে নিয়ে যেতে! মাঝে মাঝে মনেহয়, উনারা সাত আসমানে যাবার পরেও আরো উপরে যেতে চাইবেন!!
তাদের এই চাহিদা না-শেষ হওয়ার ফলশ্রুতিতে বেড়ে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্মের বেকারত্ব, কিশোর গাং এর মত সংগঠন, চাটুকার পারদর্শী এবং দলীয় কর্মীর মোড়কে রাজনৈতিক দাসপ্রথা!!
যে দাস প্রথার অন্তর্ভুক্ত বেশিরভাগ, রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা – কর্মচারী, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীগণ। আর যারা দেশ ও জনগণের ভালো চাইছেন তারা হয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন অথবা সসম্মানে এই দেশ ত্যাগ করেছেন!
নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করি, তাহলে অবসর প্রাপ্ত হওয়ার পরেও সরকারি কর্মকর্তারা সুখ শান্তির জীবন রেখে রাষ্ট্র পরিচালনার মতো এত বড় বোঝা বহনের কামলা হচ্ছেন কি কারণে?! তাহলে কি আমাদের দেশে যোগ্য ও মাধবী তরুণ আমলা বা রাজনৈতিক ব্যক্তি অথবা পরিচালনাকারীর অভাব, নাকি সব মারপ্যাঁচ পাসকাটিয়ে অবসর প্রাপতরা আমলাতন্ত্রের ক্ষমতা স্থীকরণ এবং তাদের অর্জিত অবৈধ সম্পদ রক্ষা বা বৃদ্ধির একটি বিশেষ পন্থায় লিপ্ত?!? যে কারণে রাজনৈতিক ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ব্যক্তি এবং অন্যান্যদের ব্যক্তিগত সম্পদের সঠিক হিসেব হলেও সরকারি আমলাদের সম্পদ হিসেবের ক্ষেত্রে মুখে অদৃশ্য কুলুব’য়েটে দেয়া হয়!
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে দেখাযায়, দেশ পরিচালনার প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রদ্ধাভাজন মেধাবী প্রবীণদের নিকট হতে গুরুত্বপূর্ণ মতামত নেয়া হয়। কিন্তু আবেগের বসে তাদেরকে কোন গুরু-দাইত্বের ভার দেয়া হয় না বা ব্যস্ত কোন চেয়ারে বসানো হয় না। কারণ, তারা অবসর প্রাপ্ত, ক্লান্ত এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ববান প্রবীণ নাগরিক।
কথায় আছে, একটি বাড়ির মালিকের চরিত্র তার অধিনস্ত চাকরের ব্যবহার দেখেই আন্দাজ করা যায়!
এই যেমন কিছুদিন আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এর উপদেষ্টার নিকট একটি গুরুতবপুর্ন বিষয় অবগত করার জন্য তার সহকারী মুহাম্মদ হাসনাত মোর্শেদ ভূঁইয়া (উপসচিব) এর কাছে মাননীয় উপদেষ্টা মোহদয়ের হোয়াটসঅ্যাপ অথবা ইমেইল এড্রেস চাওয়া হয়।
যার কোনো প্রতিউত্তর আজও পাওয়া যায়নি।
ঠিক এভাবেই প্রতিটি ভালো কাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন ঊর্ধ্বতনদের কিছু বিশেষ চাটুকার সহকারীগণ!
আমি মনে করি জনগণ ও দেশের উন্নয়নে চাটুকার সহকারী বা আমলা হতে সাবধানতা ও সাধারণ জনগণের মতামত প্রকাশের গুরুত্ব প্রদানের কোন বিকল্প নেই।
সার্বিক বিবেচনায় মনেকরি, বাংলাদেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতেহলে, আমাদের তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সুস্থ পন্থা ও সুগম পথ সৃষ্টির সথে সহযোগিতা করা ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ নেই। সেই সথে তরুণ প্রজন্মের উন্নতির বিষয়টি রাষ্ট্রের প্রতিটি ব্যক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও দায়ভার বা দায়বদ্ধতা মনে করা উচিত।
কারণ,তরুণ মেধাবীদের উপরে উঠার সিঁড়ি প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত চলার পথ সহজ করে দেবার দায়দায়িত্ব এইদেশের মেধাবী ও যোগ্যতা সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাভাজন প্রবীণদের এবং দেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের বিশেষ অংশ আমলা, রাজনৈতিক নেতা দলীয় বা নির্দলীয় রাষ্ট্র পরিচালিনাকরির এবং রাষ্ট্রপ্রধানের।
শ্রদ্ধাভাজন রাষ্ট্রপ্রধান এবং নবীন ও প্রবীণ আমলাদের দেশপ্রেম প্রমাণ হবে তখনই, যখন মেধা ও যোগ্যতাবলে এইদেশের তরুণরা বিনা বাধায় প্রাইমারি শিক্ষা হতে কর্মস্থলের ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারবে সর্বত্র।
সেই সাথে সকল রাষ্ট্রীয় অপরাধের মূল কারণ, ঘুষ বাণিজ্য ও তরুণ প্রজন্ম ধ্বংসকারী মাদক আমদানি বন্ধ হবে যখন। এবং সাধারণ জনগণের অধিকার ও নিরাপত্তা বিধান হবে যখন। বিশেষ করে যখন রাজনীতিক ও সরকারি উচপদের কর্মকর্তাদের অপকর্মের জবাবদিহিতা ও বিচারিক অবস্থান হবে কঠোর, সঠিক এবং সচ্ছ পথে।লেখক: কে.হোসাইন –
Leave a Reply