নিজস্ব প্রতিবেদক :
বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার বিষ খালি নদীতে বসত ভিটা বিলীন হওয়ার পর,জেলায় যাওয়ার রামনা ইউনিয়নের একমাত্র সড়কটি তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ কারণে নদীর তীরবর্তী কয়েক হাজার পরিবার প্লাবনের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাছাড়া বাঁধটি সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এটি নদীতে বিলীন হয়ে গেলে আশপাশের কয়েক হাজার মানুষের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।
ইতিমধ্যে রাক্ষুসে বিষ খালীর অব্যাহত ভাঙনে ফসলি জমি, বাগান, রাস্তা ও কয়েক শ বসতভিটাও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাছাড়া রামনা লঞ্চঘাট থেকে ফুলঝুড়ি খেয়াঘাট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়ক, মসজিদ, মাদ্রাসা, প্রাইমারি স্কুল সহ কয়েক হাজার মানুষের বসত ভিটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এখনই নদীভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিস্তীর্ণ জনপদসহ অনেক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।
স্থানীয় লোকজন জানান, বামনা উপজেলার ৩ নং রামনা ইউনিয়ন ফুলঝড়ী খেয়া ঘাটের পশ্চিমপাড়
থেকে রামনা লঞ্চ ঘাট নদীতীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে উত্তর রামনা পশ্চিম পাড় পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা এতই বেশি যে রাত–দিন সমান তালে
রাস্তা, বাড়িঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা নদীর পেটে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
রবিবার (২০ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার রামনা ইউনিয়নের এলাকায় নদীতীরের মানুষ ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। গাছগুলোও কেটে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো: কবির বলেন, তাদের তিন পুরুষের প্রায় ১৬ কানি জমিজমা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক পরিবার নদীর ভাঙ্গনের কারণে নিঃস্ব হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, মাথা গোজার ঠাঁই নেই,তারাই রাস্তার পাশে বালু ভরাট করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সময় নদী ভাঙ্গন রোধে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করলেও ভাঙ্গন রোধ হয় না। আগে দ্রুত ভাঙতো, বর্তমানে আস্তে আস্তে ভাঙে। কিন্তু নদীর ভাঙ্গন থামে না।
গত কয়েক মাসে অন্তত ১০ টি এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়; কিন্তু এখনো স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
উত্তর রামনা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বাসিন্দারা ঘরের কিছু জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। উক্ত গ্রামের মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, নদীটি তাঁদের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ছিল। হঠাৎ বন্যায় রাস্তা ভেঙে নদীতে চলে যাওয়ার পর থেকে জোয়ারের সঙ্গে প্রতিদিন বাড়িঘরে পানি ঢুকে যায়। জোয়ারের পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। তাঁদের আশপাশে শতাধিক বাড়ি ও বেশ কিছু গাছের বাগান ছিল। হঠাৎ বাড়িঘরের সঙ্গে নদীভাঙনে গাছপালাও বিলীন হয়ে গেছে। তাঁর ঘরের বেশির ভাগ অংশ নদীতে চলে গেছে। যেকোনো সময় পুরো বাড়ি নদীতে চলে যেতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
একই গ্রামের মো: সাইজুল বলেন, হঠাৎ ভাঙনের শিকার হয়ে পরিবারগুলো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের অনেক দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। কিন্তু এখানে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে মানুষ গৃহহারা হয়েছেন। চোখের সামনে বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তাঁরা কিছুই করতে পারছেন না। তাঁদের দেখার যেন কেউ নেই।
রামনা গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, বামনা উপজেলা হয়ে ফুলঝড়ি খেয়া ঘাট পাড় হয়ে বরগুনা জেলায় যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। এই সড়কটি আজ ভাঙ্গনের মুখে। বন্যার পর থেকে নদীতে প্রবল স্রোত বইছে। প্রায় দুই থেকে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে। পাড় ভেঙে নদীতে আছড়ে পড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা কামাল বলেন,
১০ বছর আগে তাঁর বাড়ি নদীতে চলে যায়। এখন অন্যের জমিতে থাকেন। এ গ্রামেও ভাঙন হচ্ছে। গ্রামের চার ভাগের দুই ভাগ এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে যেভাবে ভাঙন চলছে, তাতে কোনো ব্যবস্থা না নিলে কয়েক মাসের মধ্যে বহু ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিন নং রামনানা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর নদীভাঙনে উত্তর রামনার সাধারণ মানুষ সবাই এখন সর্বস্বান্ত। এখানকার প্রায় পরিবার নদীভাঙনের শিকার হন। তাঁরা সব হারিয়ে এখন অন্যের বাড়িতে কিংবা সরকারি জমিতে বসবাস করেন। এমন বহু পরিবার সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে।
প্যানেল চেয়ারম্যান বাকী বিল্লাহ আরো বলেন, এলাকাবাসী বালুভর্তি বস্তা ফেলে ও বাঁশ-গাছ দিয়ে ছোট ছোট বাঁধ নির্মাণ করে নিজেদের ঘরবাড়ি রক্ষার চেষ্টা করেছেন; কিন্তু কিছুতেই তা টিকছে না। সরকারিভাবে জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করলেও দুই এক বছর পর আবার ভাঙ্গন শুরু হয়। তাই স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন রোধ করতে ব্লক দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
এ বিষয়ে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত ইকবাল মেহেরাজ দৈনিক আমার দেশকে বলেন, বামনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙনের স্থানগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। ডিজাইনের কাজটা শেষ হলেই নদী ভাঙ্গান রোধে খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে। ব্লকের বাজেট না থাকায় জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ চলবে। তিনি আরো বলেন,
ওখানকার মাটির গঠন খুব খারাপ। ওই সড়কে বড় ট্র্যাক, টলি, মালবাহী বাহন নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। কারণ ওই সড়কের বাহন গুলো চললে একটা কম্পন তৈরি হয়। এতে করে সড়কটি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সড়কটি রক্ষার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনসহ জনগনকে খেয়াল রাখতে হবে উক্ত সড়কে বাড়ি যান বহন যেন না চলাচল করতে পারে।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, উত্তর রামনার রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
Leave a Reply