নিউজ ডেস্ক,সময় সংবাদ: জ্যৈষ্ঠ মাস মানেই মিষ্টি মৌসুমি ফলের সমাহার। তাই একে ‘মধু মাস’ও বলা হয়। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি অপরিপক্ক ফলে ছেয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন বাজার।এসব মৌসমী অপরিপক্ক ফলের মধ্যে রয়েছে আম,লিচু, আনারস, অন্যতম। এছাড়াও এ তালিকায় রয়েছে লটকন,ডালিম, জামরুল,পেয়ারা,পেপে ও কলা।
জানা গেছে, অপরিপক্ব ফলকে কেমিক্যাল দিয়ে কৃত্রিমভাবে পাকানো হচ্ছে। আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে—প্রায় সব ফলেই ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথিলিন গ্যাসসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ।
দেশের এক শ্রেণির অসাধু মধ্যসত্বভোগী অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা অধিক লাভের আশায় কৃত্রিমভাবে ফল পাকিয়ে ফলের পুষ্টিগুন বিনষ্ট করে বাজারে বিক্রি করছে।ক্যালসিয়াম কার্বাইডসহ বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে মৌসুমি ফল পাকিয়ে বাজারজাত করছে।এতে ক্রেতাসাধারণ ও চূড়ান্ত ভোক্তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত,প্রতারিত হয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এসব কৃত্রিমভাবে পাকানো ফল খেয়ে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে। অথচ প্রশাসনের দৃষ্টি নেই বললেই চলে।
ফলের আড়তগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, টসটসে আমগুলো হাতে নিলেই উঠে আসছে সাদা পাউডারের প্রলেপ। ফল রাখা হয়েছে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে, কেমিক্যালে মোড়া অবস্থায়। এখান থেকেই প্রতিদিন এসব ফল ছড়িয়ে পড়ছে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে।
এক ফল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মৌসুমের শুরুতে দাম বেশি থাকে। তখন মুনাফা বেশি হয়। কিন্তু অপরিপক্ব ফল স্বাভাবিকভাবে পাকতে দিলে অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই কেমিক্যাল দিয়ে পাকাতে বাধ্য হচ্ছি।”
ক্রেতারা বলছেন, বাজারের ফলগুলো দেখতে যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, খাওয়ার সময় আতঙ্ক থেকেই যায়—‘এই ফল কি রাসায়নিক দিয়ে পাকানো?’
বিভিন্ন বাজারগুলোতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আম, লিচু, আনারস, লটকন, পেয়ারা,পেপে ও কলার মত নানা রকম এসব বাহারী মৌসুমি ফলের পসরা সাজিয়ে দোকান বসিয়েছেন ফল ব্যবসায়ীরা। এসব দোকানে উৎসুক ফল প্রেমীদের ফল কিনার দৃশ্য চোখে পড়ার মত।এসব ফল তারা অনায়েসে কিনে নিয়ে তুলে দিচ্ছে পরিবারের সদস্যদের মুখে।
বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আকার ও প্রকারভেদে লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা আটি, এক আটিতে থাকছে ১০০টি লিচু। আম ৫০ থেকে ১২০ টাকা কেজি,জাম ২০০টাকা কেজি, আনারস বিক্রি হচ্ছে ১২০টাকা জুড়া থেকে ২০০টাকায়,পেয়ারা ৬০টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা জানান ২০০ টাকা দিয়ে চাইনা-৩ জাতের ৫০টি লিচু কিনেছি।এসব লিচুতে কোনো প্রকার রস নাই,স্বাদ তো নাই ই।আমার টাকাটায় নষ্ট।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড আর্দ্রতার সংস্পর্শে এলে অ্যাসিটিলিন গ্যাস উৎপন্ন করে। এটি দ্রুত ফল পাকায়, কিন্তু শরীরে গেলে ত্বকে জ্বালা, শ্বাসকষ্ট, পেটের সমস্যা, এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণ মানুষ মৌসুমি ফল হিসেবে কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো এসব অপরিপক্ক ফলকে পরিপক্ক মনে করে চড়া দামে কিনে নিজেরা ও তাদের বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছে।কিন্তু তারা বুঝতেই পারছে না এসব ফলের সাথে তারা বিষ কিনে খাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এসব অপরিপক্ক ফল বিক্রি ঠেকাতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও ভোক্তা অধিকার আইন প্রয়োগসহ জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন এ বিষয়ে আমাদের স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে নির্দেশনা দিয়ে দেবো।উনি বাজার গুলো পরিদর্শন করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা নিবেন।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—যারা কেমিক্যাল দিয়ে ফল পাকিয়ে বাজারজাত করছে, তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? তারা ফলে নয়, মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছে বিষ! এই চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠেছে সর্বত্র।
Leave a Reply