সময়সংবাদ ডেস্ক, ঢাকা: স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফর (এলজিইডি)’তে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে একটি সিন্ডিকেট ফায়দা লুটে নেয়ার চেষ্টা করছে। সচেতন মহলের প্রশ্ন আসলে এরা কারা। এই বিএনপিপন্থী দুই কর্মকর্তার অনৈতিক হস্তক্ষেপে অতঙ্কিত এলজিইডির কর্মকর্তা কর্মচারীরা। ফলে ব্যহত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়ন কার্যক্রম। অন্যদিকে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে।
জানা গেছে, গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৬ আগষ্ট সকাল থেকে দফায় দফায় মহড়া দিয়ে পুরো এলজিইডির নিয়ন্ত্রন নেন প্রকৌশলী মঞ্জুর আলী ও প্রকৌশলী আব্দুর রউফ। তাঁদের দখলদারিত্বের ভিডিও ও স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। বদলি বানিজ্য এবং প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের নামে ইতিমধ্যে শতাধিক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে। অন্যদিকে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে দায়মুক্তিও দিচ্ছেন তাঁরা।
দখল দারিত্বের বিরুদ্ধে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান নিলেও সরকারি চাকুরে এসব ব্যক্তিরা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে দখল দারিত্বসহ সব ধরণের অনিয়ম দুর্নীতি অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন, যা প্রতিষ্ঠানটির সবাই জানেন। কিন্তু সরকারও তাঁদের লাগাম টেনে ধরতে পারছেন না।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সচিব গত ৯ সেপ্টেম্বর এলজিইডিতে আসেন। উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ জাতীয় অর্থনীতিতে এলজিইডির অবদানের ওপর গুত্বারোপ করে কিছু কাজের মান নিয়ে প্রশ্নও তুলেন। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান পরিস্কার করেই বলেন, আগে যাঁরা বঙ্গুবন্ধু পরিষদ করতেন, তাঁরা এখন সবাই জিয়া পরিষদ করছেন। তিনি বলেন, আমি জানি-কারা কি করছেন। তিনি একই সঙ্গে টাকার বিনিময়ে ঢালাওভাবে বদলি না করার জন্য সর্তক করেন। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে কাউকে হয়রানী না করার আহবান জানান। সচিবের কথায় থেমে যায়নি তাঁদের অপরাধ কর্ম।
বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী আলী আকতার হোসেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ-এর সভাপতি ছিলেন, কিন্তু সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিপন্থী হয়ে গেছেন। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোজাক্কা জাহের আগাগোড়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও ব্যানার পাল্টিয়ে বিএনপিপন্থী বণে গেছেন। প্রধান প্রকৌশলী আলী আকতার হোসেন, অতিরিক্তি প্রধান প্রকৌশলী মোজাক্কা জাহের, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মঞ্জুর আলী, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রউফের সিন্ডিকেটে চলছে এলজিইডিতে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ও স্থিরচিত্র পর্যালোচনার পর অনুসন্ধানে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। অসংখ্য সূত্র জানায়, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গ সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মঞ্জুর আলী, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রউফের নেতৃত্বে দফায় দফায় মহড়া দিয়ে এলজিইডি তাঁদের দখলে নেয়া হয়। বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে তাঁরা দখল বানিজ্য করতে গিয়ে পুরো প্রতিষ্ঠানকেই কার্যত কোনঠাসা করে ফেলেছেন।
সিনিয়র সহকারি প্রকৌশলী থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের পিয়ন পর্যন্ত বাদ যাচ্ছেন না তাঁদের বদলি-বানিজ্য থেকে। বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালকদের রদ-বদল এবং একজনকে সরিয়ে আরেকজনকে দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। বদলি, পদোন্নতিসহ সকল আদেশ এলজিইডির ওয়েবসাইটে আপলোড করে প্রকাশের নিয়ম থাকলেও তা করা হচ্ছে না।
আওয়ামী সরকারের আমলে এলজিইডি সদর দফতরে রাম-রাজত্ব করা তত্ত্বাবধায়ক দুই প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিন ও মো. সেলিম মিয়াসহ তাঁদের অনুসারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দুর্নীতির দায়মুক্তি দিচ্ছেন বলেও আলোচনা হচ্ছে। উচ্চ আদালত থেকে মামলার রায়প্রাপ্ত সাড়ে তিন হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারিকে রাজস্বখাতে নিয়োগ দেয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। সেখান থেকেও কয়েক দফায় টাকা নেয়া হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী সরকারের প্রথম আমলে উচ্চ আদালতের রায়প্রাপ্ত ২৫৭ জন সহকারী প্রকৌশলীকে রাজস্ব করা হয়। কিন্তু তখন সরকারি নিদের্শনা থাকা সত্ব্যেও পিএসসির কোনো মতামত নেয়া হয়নি এবং অর্থ মন্ত্রনালয়কেও নিয়ম অনুযায়ী জানানো হয়নি। তাঁদের মধ্য থেকে এবার একশো জনকে পঞ্চম গ্রেড দেয়ার জন্য রফাদফা করা হয়েছে। চাকরি প্রাপ্ত এসব প্রকৌশলীদের মধ্যে মঞ্জুর আলীর স্ত্রীসহ আব্দুর রউফের আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
মঞ্জুর আলীর গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর হলেও স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে আব্দুর রউফের পরিবার রিফিউজি হিসেবে পশ্চিম বঙ্গ থেকে এসে বাংলাদেশের নাটোরে আবাস গড়ে তুলেন। প্রধান প্রকৌশলী আলী আকতারের পরিবারও রিফিউজি হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। তাঁরা সবাই এরশাদের আমলে তৎকালীন খুলনা প্রকৌশল কলেজে পড়াশোনা করেন। রিফিউজিদের কি পরিমান অর্থ সম্পদ থাকতে পারে তা খুব সহজেই অনুমেয়। কিন্তু তাঁদের একাধিক প্লট, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ ঢাকায় ও গ্রামের বাড়িতে রয়েছে শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি। এছাড়া মঞ্জুর আলী ও মোজাক্কা জাহের গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিলেও তাঁদেরও শতাধিক কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। যা তদন্ত করলেই তাঁদের সম্পদের হিসাব বেরিয়ে আসবে।
উল্লেখ্য, মঞ্জুর আলীর শশুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে তৃতীয় শ্রেণীর অবসরপ্রাপ্ত একজন চাকুরের শতাধিক কোটি টাকার সম্পদ থাকার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা রয়েছে।
Leave a Reply