সময়সংবাদ ডেস্ক :
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, রাজনৈতিক দলসহ সকল স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সাথে সরকারকে বিদায় নিতে হবে। সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে। একটি যৌক্তিক সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার আল ফারুক সোসাইটিতে খুলনা মহানগর জামায়াত আয়োজিত রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে রুকন সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মো. মোবারক হোসাইন ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ।
রুকন সম্মেলনে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু করা এই জাতির ওপর ধারাবাহিক অত্যাচার, নির্যাতন, গুম, খুন, রাহাজানি লুণ্ঠন, ধর্ষণ এবং সার্বিক জুলুমের বিরুদ্ধে জনগণের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত আমাদের কলিজার টুকরা ছাত্র-ছাত্রীদের নেতৃত্বে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সংগ্রামের যে সূচনা হয়েছিল, আল্লাহ তা’আলা তার মধ্য দিয়ে গোটা জাতিকে সম্পৃক্ত করে জুলুমতন্ত্রের অবসান করেছেন। এই জুলুম থেকে আমরা কেউ মুক্ত ছিলাম না। এই রাষ্ট্রের কোনো নাগরিকই তাদের লুটপাট এবং জুলুমের বাইরে ছিল না।
আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে জামায়াতের আমির বলেন, গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। রাজনীতি করতে হবে দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে, বাইরের কারও সাহায্য নিয়ে নয়।
পিলখানা বিডিআর বিদ্রোহের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ৫৭ জন কমিটেড, দেশ প্রেমিক, চৌকস সেনা অফিসারকে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে খুন করা হয়েছে। এই জঘন্য কাজটি কারা করল? আমাদের সেনাবাহিনীর ওপরে কারা এত বড় আঘাত দিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে কোননো বিশ্বযুদ্ধে একদিনে এতগুলো সেনা অফিসার কোথাও খুন হয়নি। এই কলঙ্কের ইতিহাস রচনা হলো আমাদের দেশের ওপর। এত বড় সর্বনাশটা কে করল? আজ পর্যন্ত জাতির কাছে তা উন্মোচন হলো না।
আওয়ামী লীগের শাসনামলের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বিডিআর হত্যার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদি শাসনের প্রথম ধাপ শুরু হয়। এরপর জামায়াতের ওপর স্টিম রোলার চালানো হয়। পর্যায়ক্রমে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়ে অথবা কারাগারে রেখে হত্যার মধ্যদিয়ে শেষ পর্যন্ত জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চালানো হয়। যারা সারাজীবন ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেই ইসলাম অবমাননার কথিত অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু ইতোমধ্যেই জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরা গ্রেপ্তার হতে শুরু করেছে। বর্তমান সরকার ওইসব ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় এনে একটি বিচারিক সূচনা করবে বলেও তিনি আশা করেন।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, বিগত পনের বছরের আওয়ামী শাসনামলে রাষ্ট্রের কোনো নাগরিকই লুটপাট ও জুলুমের বাইরে ছিল না। হাজারো মানুষের, মা-বোনদের, শিশুর কান্নার রোল আল্লাহর আরশে পৌঁছে গেছে। যার ফলেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয় দেশের ছাত্র-জনতার মাধ্যমে।
সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বিগত পনের বছরের অনেক মজলুমের চোখের পানির ফসলই হচ্ছে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান। আওয়ামী লীগের ১৫ বছর আর মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের দু’বছর এই ১৭ বছরের জুলুম-নির্যাতনের পরও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এ দেশের মানুষের প্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস আর আস্থার কারণে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১৭ বছরের জুলুম নির্যাতনের কলঙ্কিত অধ্যায় থেকে মুক্ত হয়েছি। আজ দেশের যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি এটিকে ধরে রাখতে প্রতিটি শপথের কর্মীকে চরম ধৈর্যের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
রুকন সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমির মাওলানা মুহাম্মদ এমরান হুসাইন। দারসুল কুরআন পেশ করেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন, নগর সেক্রেটারি এড. শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল ও জেলা সেক্রেটারী মুন্সি মিজানুর রহমান।
Leave a Reply