রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচে ১৬ রানের জয় বাংলাদেশের ডায়াবেটিসের যে ৫ লক্ষণ উপেক্ষা করবেন না সরকারি কর্মকর্তাদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন উপদেষ্টা ‘পবিত্র আশুরা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস যোগাবে’ উপকূলে ঝড়ের শঙ্কা, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত তুর্কমেনিস্তানকে গোলবন্যায় ভাসিয়েছে বাংলাদেশ জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গত ১৫ বছরের সাংবাদিকতা তদন্ত হবে : প্রেস সচিব মুরাদনগরের চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় আটক ৬ খুব শিগগিরই চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে : খাদ্য উপদেষ্টা সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৪৮ রান টসে জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে দুই পরিবর্তন সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদা আর নেই যে কোনো মূল্যে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করব: নাহিদ সরকারি টানা ৩ দিনের ছুটি, পাবেন না যারা দুই বড় বিষয়ে ঐকমত্যে রাজনৈতিক দলগুলো: আলী রীয়াজ আদালত ফ্যাসিস্টমুক্ত করলেই বিচারবিভাগ কলঙ্কমুক্ত হবে: সালাহউদ্দিন আহমেদ ব্যাটিংয়ে দুর্দশা নিয়ে যা বললেন বিসিবি সভাপতি ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও মাফিয়াতন্ত্র শেষ হয়নি : নাহিদ বিচার ব্যবস্থাকে দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে: ডা. তাহের গুমের ঘটনায় সেনাসদস্যদের সংশ্লিষ্টতা থাকলে ব্যবস্থা : সেনাসদর

বঙ্গবন্ধু টানেলে ১১ মাসে ক্ষতি ৮৩ কোটি টাকার বেশি !

  • সংবাদ প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২.৪৫ পিএম
  • ১৮৯ বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

সময় সংবাদ ডেস্ক :

আয়-ব্যয়ে সঙ্গতি নেই চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী তলদেশের বঙ্গবন্ধু টানেলে। ফলে লোকসানে আছে টানেলের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বাসেক)। দৈনিক ব্যয় অপেক্ষা আয় অর্ধেকেরও কম। গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ঋণের কিস্তি পরিশোধ। সমীক্ষার গলদ, লাইট পরিবহনের অনুমতি না থাকাসহ বেশ কিছু কারণে এই লোকসান বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

সেতু কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে টানেল থেকে টোল বাবদ দৈনিক গড়ে আয় হচ্ছে ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ দিনে ব্যয় গড়ে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। কর্তৃপক্ষের দৈনিক লোকসান ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। সে হিসাবে গত ১১ মাসে ক্ষতি ৮৩ কোটি টাকার বেশি।

টানেল নির্মাণের আগে করা সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছিল, চালুর প্রথম বছর প্রতিদিন গড়ে যানবাহন চলবে ১৭ হাজারের বেশি। কিন্তু গত আগস্ট পর্যন্ত এই টানেল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে চার হাজার ৮২টি যানবাহন এ টানেল ব্যবহার করেছে। মূলত সমীক্ষার সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির মিল না থাকায় এ অবস্থা।

বঙ্গবন্ধু টানেল তৈরিতে ব্যয় হয় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। টানেল নির্মাণে যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই না করা, দূরদর্শিতার অভাব এবং অতিরিক্ত নির্মাণব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

টানেল নির্মাণের আগের সমীক্ষা অনুযায়ী যানবাহন চলাচলের যে ধারণা করা হয়েছিল তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কর্ণফুলী টানেলের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে শাহ আমানত সেতু। এ সেতুর তুলনায় কর্ণফুলী টানেলের টোল হার যানবাহন ভেদে আড়াই থেকে ছয় গুণ পর্যন্ত বেশি।- বুয়েট অধ্যাপক ড. সামছুল হক

প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘চট্টগ্রামে এই মুহূর্তে যে টানেল উপযুক্ত না, তা আমরা অনেক আগ থেকে বলে আসছি। আগামী দিনে যে প্রকল্পটি লাভজনক হবে সে সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। কারণ টানেল ঘিরে পর্যটন শহর কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প স্থাপনের কথা ছিল, তা দৃশ্যমান নয়। ফলে টানেল দিয়ে গণপরিবহন তেমন চলছে না। টানেল নির্মাণে বাড়তি খরচ করা হয়েছে। কিন্তু আয় হচ্ছে কম। বিদেশি ঋণ কীভাবে পরিশোধ করা হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।’

গাড়ি কম কেন? যা বলা হয়েছিল সমীক্ষায়
২০১৭ সালে কর্ণফুলী টানেল চালু হবে ধরে নিয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় যান চলাচলের প্রাক্কলন করেছিল চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যেখানে বলা হয়েছিলে, ২০২০ সালে টানেল চালু হলে দিনে ২০ হাজার ৭১৯টি যানবাহন চলবে। প্রতি বছর তা ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হারে বাড়বে। ২০২৫ সালে দৈনিক গড়ে ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলবে। ২০৩০ সালে সংখ্যাটি দাঁড়াবে দিনে প্রায় ৩৮ হাজার।

২০২০ সালের জায়গায় টানেল চালু হয়েছে ২০২৩ সালে। সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাবে চালুর পর গত আগস্ট পর্যন্ত দিনে যানবাহন চলেছে গড়ে ৪ হাজার ৬১৩টি করে। টোল আদায় হচ্ছে দিনে গড়ে ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে অধিকাংশই পর্যটকবাহী পরিবহন। গত ছয়মাসে চলাচল করা যানবাহন আরও কমেছে।

সেতু কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উদ্বোধনের পর প্রথম মাসে (নভেম্বর) টানেলে গাড়ি চলাচল করেছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৩১২টি। সে হিসেবে ওই মাসে প্রতিদিন গাড়ি চলেছে পাঁচ হাজার ৫৪৪টি। এতে আয় হয়েছে তিন কোটি ৯৪ লাখ ৪২ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু চলতি বছর এপ্রিল মাসে গাড়ি চলাচল করেছে এক লাখ ১৫ হাজার ৬৪৮টি। সেই হিসাবে দৈনিক গাড়ি চলেছে তিন হাজার ৮৫৫টি। চলতি (সেপ্টেম্বর) মাসের প্রথম ২১ দিনে টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচল করেছে ৬৪ হাজার ৫৪৯টি। সেই হিসাবে সেপ্টেম্বরে দৈনিক গাড়ি চলেছে তিন হাজার ৭৩টি। অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে টানেলে গাড়ি চলাচল কমছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, ‘টানেল নির্মাণের আগের সমীক্ষা অনুযায়ী যানবাহন চলাচলের যে ধারণা করা হয়েছিল তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কর্ণফুলী টানেলের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে শাহ আমানত সেতু। এ সেতুর তুলনায় কর্ণফুলী টানেলের টোল হার যানবাহন ভেদে আড়াই থেকে ছয় গুণ পর্যন্ত বেশি। টোল হারের এ পার্থক্য টানেলে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।’

টানেল নির্মাণ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ওই সময় আমরা উন্নয়নবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছি। কিন্তু এই টানেল নির্মাণে দূরদর্শিতার অভাব ছিল। এই এক টানেল নির্মাণব্যয় দিয়ে কর্ণফুলী নদীর ওপর একাধিক সেতুসহ চট্টগ্রাম নগরকে আরও সুন্দরভাবে সাজানো যেত।- প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে গড়ে তোলা। যদিও বাইসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মতো ‘লোকাল ট্রাফিক’ পারাপারের সংস্থান না রাখায় ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ পরিকল্পনাটি হুমকির মুখে পড়েছে।

টানেলের উচ্চতা কম হওয়ায় প্রতিবন্ধকতা
যানবাহন চলাচলের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর অনুমোদিত হেডরুম হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ মিটার। সড়কের ওপর কোনো ফ্লাইওভার বা সমজাতীয় অবকাঠামো করলে যানবাহন নির্বিঘ্নে পারাপারের জন্য সেটির উচ্চতাও এ মানদণ্ড অনুযায়ী করা হয়। অথচ কর্ণফুলী টানেলে হেডরুম রাখা হয়েছে ৪ দশমিক ৯ মিটার। উচ্চতা কম হওয়ায় টানেল দিয়ে ভারী কার্গোর মতো যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। আবার নিরাপত্তাজনিত কারণে দাহ্য পদার্থসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকারও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

নির্মাণ খরচ বেশি, অতিরিক্ত পরিচালন ব্যয়
বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। যোগাযোগ অবকাঠামো বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টানেল কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয়ের হিসাবে পদ্মা সেতুর চেয়ে দেড় গুণ খরচ হয়েছে। অন্যদিকে পদ্মা সেতুর তুলনায় কর্ণফুলী টানেলের পরিচালন ব্যয় সাড়ে তিন গুণ বেশি।

‘কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ কতটা দূরদর্শী সিদ্ধান্ত?’ শিরোনামে সম্প্রতি একটি গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক। গবেষণায় অদূরদর্শী পরিকল্পনা ও টানেলটির বিভিন্ন দুর্বলতা তুলে ধরেছেন তিনি।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে কোনো টানেলে কৃত্রিম অক্সিজেন ও আলো সরবরাহ, সামগ্রিক নিরাপত্তা ও জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কর্ণফুলী টানেলও এর ব্যতিক্রম নয়। দ্বিতল পদ্মা সেতু পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণে যেখানে পাঁচ বছরে ৬৯৩ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, সেখানে একই সময়ের জন্য কর্ণফুলী টানেল পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণে খরচ হচ্ছে ৯৮৪ কোটি টাকা। কিলোমিটারপ্রতি পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণে পদ্মা সেতুর চেয়ে সাড়ে তিন গুণ অর্থ খরচ হচ্ছে কর্ণফুলী টানেলে।

ড. সামছুল হক বলেন, ‘যানবাহন চলাচলের যে পূর্বাভাস সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় দেওয়া হয়েছে, সেটি পুরোপুরি ফরমায়েশি। শুধু কর্ণফুলী টানেল নয়, বিগত সময়ের বেশির ভাগ প্রকল্পেই এমন ফরমায়েশি পূর্বাভাস বা প্রাক্কলন করা হয়েছে মূলত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে দেখানোর জন্য। ভবিষ্যতে যেন কেউ কর্ণফুলী টানেলের মতো টাকা অপচয়ের কোনো প্রকল্প করতে না পারে সেজন্য এটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘টানেল নির্মাণ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ওই সময় আমরা উন্নয়নবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছি। কিন্তু এই টানেল নির্মাণে দূরদর্শিতার অভাব ছিল। এই এক টানেল নির্মাণব্যয় দিয়ে কর্ণফুলী নদীর ওপর একাধিক সেতুসহ চট্টগ্রাম নগরকে আরও সুন্দরভাবে সাজানো যেত।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘টানেল থেকে আয় কম হওয়ায় ঋণ পরিশোধে সরকারকে রাজস্ব খাত থেকে ভর্তুকি দিতে হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সরকার কাজ করছে।’

সূত্র ; জাগো নিউজ

সংবাদটি শেয়ার করুন

অন্যান্য সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আর্কাইভ

September 2025
T F S S M T W
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031