সময় সংবাদ ডেস্ক :
রাজশাহীর সাহেব বাজারে প্রথমবারের মতো কাটা ইলিশ বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হলেও দাম দ্বিগুণ হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকালে রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ ও মৎস্যজীবী সমিতির নেতারা কাটা ইলিশ বিক্রির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ইলিশের পিস কিনতে পারার সুযোগে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খুশি দেখা গেলেও, তাদের অভিযোগ, কাটা ইলিশের দাম পুরো মাছের তুলনায় অনেক বেশি নেওয়া হচ্ছে।
সাহেব বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, অনেকদিন ধরেই ইলিশের দাম ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য ইলিশ কেনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তবে রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে এবার তারা ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন। এই উদ্যোগটি কাটা ইলিশ বিক্রির মাধ্যমে মানুষের জন্য ইলিশ কেনার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন আড়াইশো গ্রাম ইলিশও কেনা যাবে, যা আগে অনেকের জন্য অসম্ভব ছিল। ইলিশের টুকরো হিসেবে কেনার এই সুযোগ নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। গোটা মাছের তুলনায় কাটা মাছের কেজি প্রতি ২০০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, মাছ কাটার পর নাড়িভুঁড়ি ও অন্যান্য অংশ বাদ দিতে হয়, যা মাছের ওজন কমিয়ে দেয়। তাই অতিরিক্ত এই দাম যুক্ত করা হচ্ছে কাটা ইলিশের জন্য।
মাছ বিক্রেতা মোবারক হোসেন বলেন, প্রথম দিন কাটা মাছের চাহিদা বেশি। যারা চাইছেন, তারা গোটা মাছও কিনতে পারছেন। তবে কাটা মাছের দাম সাধারণ কেজি দরের মাছের চেয়ে ২০০ টাকা বেশি। কারণ, কাটার পর কিছু অংশ বাদ দিতে হচ্ছে।
তুজিন আলী নামের আরেক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, কাটা ইলিশের চাহিদা প্রথম দিন থেকেই বেশ ভালো। ক্রেতাদের অনেকেই ছোট পরিমাণে ইলিশ কিনতে চাইছেন, যা তাদের জন্য সুবিধাজনক। তবে কাটা মাছের দামের ব্যাপারে কিছু অভিযোগও আসছে। আমরা চেষ্টা করছি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পরিষেবা দিতে, কিন্তু মাছ কাটার পর কিছু অংশ বাদ যায় বলে কেজি প্রতি ২০০ টাকা বেশি পড়ছে। অতিরিক্ত এই মূল্য মাছ কাটার প্রক্রিয়াজনিত কারণেই নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে আশা করি, ক্রেতারা এই বিষয়টি বুঝতে পারবেন এবং কাটা ইলিশের বাজার ক্রমশ আরও জনপ্রিয় হবে।
তবে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, কাটা ইলিশ কিনতে পেরে খুশি হলেও দাম নিয়ে অসন্তোষ আছে। তারা বলেন, ২৫০ গ্রাম ইলিশের দাম ৪০০ টাকা অনেক বেশি। তাদের দাবি, দাম কমানো গেলে আরও বেশি মানুষ ইলিশের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ পেতেন।
ইলিশ কিনতে আসা সাদিকুল ইসলাম বলেন, দাম বেশি, তাই আগে ইলিশ কিনতে পারিনি। কেটে বিক্রি করায় এখন ইলিশের স্বাধ নিতে পারবো। তবে দাম কমানো দরকার।
আবু তালহা তিনভাগ ইলিশ কিনেছেন। তিনি জানান, প্রতিটি ভাগের দাম পড়েছে ৫০০ টাকা করে। এতে তিনি খুশি।
তবে সৈবুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, ইলিশের কেজি যেখানে ৭০০-৮০০ টাকা, সেখানে ২৫০ গ্রাম কাটা মাছের দাম ৪০০ টাকা! এতে তো গোটা মাছের চেয়েও কাটা মাছের দাম বেশি পড়ে যাচ্ছে।
রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয়ে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী বলেন, কাটা ইলিশ বিক্রির মাধ্যমে তারা সব শ্রেণির মানুষের জন্য ইলিশ কেনার সুযোগ সৃষ্টি করতে চান। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য মাছ কেনা আরও সহজ হবে, বিশেষ করে যারা অর্থনৈতিক কারণে ইলিশ কিনতে পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা এই প্রকল্পের কার্যক্রম মনিটরিং করবেন, যাতে এটি সঠিকভাবে চলতে পারে এবং বাজারে সবসময় কাটা ইলিশ বিক্রি করার ব্যবস্থা থাকে। পাশাপাশি দামের বিষয়েও নজর রাখার কথা বলেছেন, যেন ক্রেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের অসঙ্গতি না ঘটে।
সেকেন্দার আলী আশা করেন, এই উদ্যোগটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং সবাই ইলিশের স্বাদ নিতে পারবেন। এছাড়া প্রথম দিনেই কাটা ইলিশের বাজার বেশ সাড়া ফেলেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী এই নেতা।
Leave a Reply