ইব্রাহীম খলীল, পাথরঘাটা:
সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও ইলিশের প্রজননকাল সুরক্ষিত রাখতে আজ শনিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে ২২ দিনের জন্য সাগরে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা।
তাই গভীর সমুদ্র থেকে ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরছে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার হাজার হাজার উপকূলীয় জেলেরা।
এসময় সারাদেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণসহ ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ এবং একই সাথে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান বাস্তবায়ন করা হবে। আইন অমান্যকারীকে এক থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল অথবা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মৎস্য বিভাগের এমন সিদ্বান্তে খুশি জেলেরা। ২২ দিনের এমন কর্মহীন সময়ে জেলেদের জন্য দেয়া হচ্ছে প্রণোদনা। তবে প্রণোদনা বাড়ানোসহ নির্ধারিত সময়েই তা প্রকৃত ইলিশ শিকারীদের মাঝে বিতরণের দাবি উপকূলীয় জেলেদের।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৩ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ৩ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত। আজ শনিবার (১২ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে শুরু হচ্ছে এই নিষেধাজ্ঞা। এদিকে সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে অসংখ্য ট্রলার ঘাটে ফিরে আসায় দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) তে ইলিশ আসার পরিমাণ বেড়েছে আগের তুলনায় তিন-চার গুণ। নিষেধাজ্ঞা সামনে রেখে হৈচৈ ও হাঁক-ডাকে ক্রেতা ও বিক্রেতায় ভরপুর পাথরঘাটার বিএফডিসি মৎস্য ঘাট এলাকা।
এফবি শান্তা ট্রলারের মাঝি আশ্রাফ আলী জানান, আমাদের দেশে যখন অবরোধ দেয়া হয়। ভারতীয় এবং মিয়ানমারের জেলেরা তখন মাছ শিকার করে। আলোচনা করে যদি একই সময়ে অবরোধ দেয়া হয়, তবে আমাদের জন্য ভালো হয়।
মোশারফ হোসেন নামের এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে শনিবারের পর থেকে ২২ দিনের জন্য শূন্য থাকবে পাথরঘাটার প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বিএফডিসি সহ উপজেলার সকল মৎস্য আড়ৎ। আর তাতে বেকার হতে বসেছে হাজার হাজার মৎস্যজীবীরা। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বরফ কলগুলোও। তবে সঠিকভাবে প্রণোদনা বন্টনের ধারাবাহিকতা থাকলে আশাকরি বেশি সমস্যা হবে না।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ করা গেলে বাড়বে মাছের উৎপাদন, যার সুফল ভোগ করবে জেলেসহ ব্যবসায়ীরা। ফলে উপকূলীয় জেলেরা বিষয়টি বুঝতে পারায় কেউই এখন আর অবরোধকালীন সময়ে মাছ শিকার করতে যায় না। তবে এসময়ে জেলেদের যে সহায়তা (২৫ কেজি চাল) দেয়া হয় তা খুবই নগন্য, তাই জেলেদের সহায়তা বাড়ানোসহ পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। এছাড়াও তিনি বলেন, বছরে একাধিক অবরোধ না দিয়ে প্রজনন ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একবার অবরোধ দেয়াই যথার্থ।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাসিবুর হক বলেন, শনিবার মধ্যরাত থেকে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সাগর ও মোহনায় ২২ দিন মাছ ধরা,পরিবহন ও মজুদের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা হবে। আগামী ২২দিন যেন কোন অসাধু জেলে নদীতে না নামেন, সেজন্য উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ঘাটে লিপলেট বিতরণ ও মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করা হয়েছে। আগামী ২২দিন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করা হবে। নৌ-পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নদীতে ও সাগরে পাহারায় থাকবে।
Leave a Reply