সময় সংবাদ ডেস্ক :
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা দেখে পুরো বিশ্ব স্তব্ধ। অসহায় গাজাবাসীর আর্তনাদে মর্মাহত হয়েছেন অনেকেই। গাজার সেই ছোট্ট শিশু যে তার মৃত বাবা-মাকে খুঁজছে, সেই শিশুর কান্না দেখে হয়তো অনেকেরই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তবে ফিলিস্তিনিদের কান্না আমরা দেখতে পেলেও ইসরায়েলিদের অসহায়ত্ব হয়তো আমাদের অনেকেরই অজানা। হ্যা, শুধু ফিলিস্তিনই নয় ইসরায়েলেও অনেকে শান্তি চায়। গাজাবাসীর মতো যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে ইসরায়েলিরাও মুক্তি চায়।
ইসরায়েল যেই সেনাদের দিয়ে গাজায় নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে সেই সেনারাই যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে শিউরে ওঠে। মানবিকতার চরম অবক্ষয়ের এ ধ্বংসলীলা দেখে হাজার হাজার ইসরায়েলি সেনা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গাজার দুর্বিষহ স্মৃতি নিয়ে ফেরা অনেকেই আত্মহত্যা করেছেন। তাদেরই একজন এলিরান মিজরাহি।
চার সন্তানের বাবা এলিরান মিজরাহি। ইসরায়েলের একজন সেনাসদস্য ছিলেন। গত বছর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় লড়াই করতে পাঠানো হয়েছিল তাকে। তবে তিনি এমন এক হৃদয়বিদারক স্মৃতি নিয়ে গাজা থেকে ফেরেন যা তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে।
৪০ বছর বয়সী ইসরায়েলি সামরিক রিজার্ভের এই সদস্য গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়। তবে যুদ্ধ করতে গিয়ে এলিরান যা দেখেছিলেন, তাতে মানসিকভাবে অনেক বড় আঘাত পান। তিনি পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভুগছিলেন। যার পরিণতিস্বরূপ তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
গাজার ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে লুকিয়ে রাখতে সেখানে বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয় না ইসরায়েল সরকার। যদিও বা কেউ কেউ সুযোগ পান, ইসরায়েলি বাহিনীর পাহারা ও নজরদারির মধ্যে থাকতে হয় তাদের। ফলে সেখানে ইসরায়েলি সেনারা কেমন অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছেন, সে চিত্রটা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে এলিরানের মৃত্যুর পর তিনি গাজায় যে নৃশংসতার চিত্র দেখেছেন তারই বর্ণনা তার পরিবার সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন। এলিরানের মা জেনি বলেন, এলিরান গাজা থেকে বাড়ি ফিরলেও গাজার ভয়াবহতার স্মৃতি তার মন থেকে ফিরে যায়নি। এলিরান প্রচণ্ড রকমের ট্রমা নিয়ে ফিরেছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি আত্মহত্যা করেন।
শুধু এলিরান নয়, তার মতো আরও হাজার হাজার সেনা চলমান এ যুদ্ধের সময় ট্রমার কারণে পিটিএসডি বা মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে বলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে। তবে আইডিএফ এর কোনও আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান দেয় নি।
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১২শ’জন নিহত এবং এবং ২৫০ জনেরও বেশি লোককে জিম্মি করার পর থেকে উভয়পক্ষের সংঘাত শুরু হয়। যা এখনো পর্যন্ত চলমান রয়েছে এবং এ সংঘাতের আঁচ লেবাননেও ছড়িয়ে পড়েছে। ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের ইতিহাসে এটাই দীর্ঘতম যুদ্ধ। যেই যুদ্ধের জের পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে এ সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গাজায় চার মাস ছিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) একজন চিকিৎসক। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি সিএনএনকে বলেন, আমাদের মধ্যে অনেক সেনাকে লেবাননে পাঠানো হতে পারে- এই ভয় পাচ্ছেন তারা। ইসরায়েলি বাহিনীর বহু সেনাসদস্য এখন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না।
সিএনএনকে বলেছেন, তারা এমন ভয়াবহতা দেখেছেন যা বাইরের মানুষ কখনোই কল্পনা করতে পারবে না। গাজাবাসীর পক্ষে পুরো বিশ্ব সমালোচনার ঝড় তুলেছে। সমালোচকরা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এ সহিংসতাকে ‘চিরকালের যুদ্ধ’ বলে নিন্দা করেছেন। এমনকি বর্বর এ যুদ্ধে অংশ নেওয়া সেনাদের ওপরও যে এর অদৃশ্য প্রভাব পড়েছে তারও আভাস পাওয়া গেছে তাদের সমালোচনায়। যেকোন উপায়ে জিততে হবে- এই মন্ত্রে নির্মোঘ হয়ে ধ্বংসলীলায় মেতেছে নেতানিয়াহুর প্রশাসন। যার বলি কেবল গাজার অসহায় মানষগুলোই হচ্ছে না, ইসরায়েলি সেনারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কারণ ইসরায়েলি সেনারা শুধু শারীরিকভাবেই যুদ্ধ করছেন না, মানসিকভাবেও তাদেরকে লড়াই করতে হচ্ছে। সিএনএন এর সাক্ষাৎকারে অজানা এমন অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন ইসরায়েলি এক সেনা, একজন চিকিৎসক ও এলিরানের পরিবার।
গত বছরের ৮ অক্টোবর এলিরান গাজায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেসময় তাকে একটি ডি-৯ বুলডোজার চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এটি ৬২ টনের একটি সাঁজোয়া যান যেটা গুলি ও বোমা হামলার মুখেও টিকে থাকতে পারে।
এলিরানের মা জেনি জানান, এলিরান আগে ইসরায়েলের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। হামাসের হামলার পর নিজ আগ্রহে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
গাজায় ১৮৬ দিন ছিলেন এলিরান। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তার বুলডোজারে হামলা চালানো হয়। এতে হাঁটুতে আঘাত পান তিনি। তারপর চিকিৎসার জন্য গাজা থেকে ইসরায়েলে ফিরিয়ে নেওয়া হয় তাকে। এপ্রিলে তাকে পিটিএসডির চিকিৎসা দেওয়া শুরু হয়। প্রতি সপ্তাহেই থেরাপি নিচ্ছিলেন। তবে এই চিকিৎসা তার জীবনে কোনো কাজে আসেনি।
এলিরান মিজরাহি
গাজা থেকে ফেরার পর অল্পতে রেগে যেতেন এলিরান, রাতের পর রাত ঘুম হতো না, ঘামতে থাকতেন। পরিবারকে বলতেন, গাজায় তিনি যে কী অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছেন, তা কেবল সেখানে তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরাই বুঝবেন। এলিরানের বোন শির সিএনএনকে বলেন, সে সব সময় বলত, আমি যে কী দেখে এসেছি, তা কেউ বুঝবে না।
আত্মহত্যা করা এই ইসরায়েলি সেনার মা বলেছেন, ‘সে অনেককে মারা যেতে দেখেছে। হয়তো কাউকে হত্যাও করেছে। তবে সন্তানদের এসব করার শিক্ষা আমরা দিই না। তাই যখন সে এমন কিছু করেছিল, তখন হয়তো বড় একটা ধাক্কা খেয়েছিল।’
মাংস খেতে ভয় লাগে
এলিরানের বন্ধু গাই জাকেনও তার সঙ্গে বুলডোজার চালাতেন। গাজায় তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে গাই সিএনএনকে বলেন, আমরা খুব কঠিন জিনিস দেখেছি, যেগুলো মেনে নেওয়া কঠিন।
গাই জাকেন এখনো মাংস খেতে পারেন না। কারণ খাওয়ার সময় গাজায় বুলডোজারের ভেতর থেকে দেখা নানা দৃশ্যের কথা তার মনে পড়ে। ঘুমাতে গেলে একপ্রকার সংগ্রাম করতে হয়। কারণ, তার কানে সব সময় বাজে বিস্ফোরণের শব্দ।
গাজায় যেসব মরদেহ দেখেছেন, সেগুলোকে এখন ‘মাংসের’ মতো মনে হয় জাকেনের কাছে। তিনি বলেন, ‘আপনি যখন বুলডোজারের বাইরে তাদের (ফিলিস্তিনি) ও আমাদের (ইসরায়েলি সেনা) প্রচুর রক্ত ও মাংস পড়ে থাকতে দেখবেন, তখন তা সত্যিকার অর্থে আপনার খাবারের ওপর প্রভাব ফেলবে।’
গাজার বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি ইসরায়েলি সেনাদের বিরূপ মনোভাব
আইডিএফের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, গাজায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের মুখোমুখি হলে ইসরায়েলি সেনারা নৈতিকভাবে একধরনের দোটানার মধ্যে পড়েন । পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, গাজাবাসীকে নিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে অবিশ্বাসের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, ‘গাজার বেসামরিক লোকজন খারাপ। কারণ, তারা হামাসকে সাহায্য করে। তাদের গোলাবারুদ লুকিয়ে রাখে।’
আইডিএফের ভাষ্যমতে, গাজায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যু কমাতে তারা সম্ভাব্য সবকিছু করছে। কোনো হামলার আগে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার জন্য খুদে বার্তা পাঠানো হচ্ছে ও ফোন করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় আকাশ থেকে সতর্কবার্তা লেখা খুদে বার্তাও পাঠানো হচ্ছে। এরপরও গাজায় বিপুল পরিমাণ বেসামরিক লোকজন নিহত হচ্ছেন। এমনকি নিজেদের ঘোষণা করা ‘নিরাপদ অঞ্চলেও’ হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এমন এক দুর্বিষহ পরিস্থিতে চরম মানসিক সংকটে ভুগছেন গাজাবাসী। ১৭ বছর ধরে অবরুদ্ধ থাকা ও ইসরায়েলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ গাজাবাসীর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর যে ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে, তা বারবার তুলে ধরেছে জাতিসংঘ ও ত্রাণ সরবরাহকারী বিভিন্ন সংস্থা।
এলিরানের আত্মহত্যার পর, গাজায় বুলডোজারে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলা একটি বাড়ির সামনে পোজ দেওয়া তার একটি ভিডিও এবং ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল। তার এসব ছবি একটি ডকুমেন্টারিতে প্রদর্শিত হয়েছিল । এবং সেখানে তাকে ‘খুনি’ বলে প্রচুর কমেন্ট করা হয়েছিল। যার ফলে পরবর্তীতে তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিগুলো মুছে ফেলা হয়েছে।
মরদেহের ওপর চালানো হয়েছে বুলডোজার
যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ লন্ডনের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আহরন বার্গম্যান। ১৯৮২ সালে লেবানন যুদ্ধের সময়সহ মোট ছয় বছর তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর হয়ে কাজ করেছেন। তার মতে, ইসরায়েল এখন পর্যন্ত যত যুদ্ধ করেছে, তার চেয়ে এবারের যুদ্ধ ভিন্ন।
বার্গম্যান বলেন, এবারের যুদ্ধ শহর এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে চলছে। সেনাদের বহু মানুষের মধ্যে লড়তে হচ্ছে। তাদের অধিকাংশই বেসামরিক।
বার্গম্যানের ভাষ্যমতে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর যেসব সদস্য সরাসরি যুদ্ধের মুখে পড়ছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন বুলডোজার চালকেরা। তারা মৃত মানুষ দেখছেন। ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে মরদেহগুলোও তাদের বুলডোজার দিয়ে সরাতে হচ্ছে। অনেক সময় মরদেহগুলোর ওপর দিয়েই তাদের বুলডোজার চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ইসরায়েলে ফেরার পর অনেক সেনা সাধারণ জীবনযাপন করতে পারছে না বলে মনে করেন আহরন বার্গম্যান। কারণ, এই যুদ্ধে বহু নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গাজায় শিশুদের নিহত হতে দেখার পর কীভাবে আপনি আপনার সন্তানদের ঘুম পাড়াবেন?’
এলিরানও রাতে ঘুমাতে পারতেন না। পিটিএসডি থাকা সত্ত্বেও, তাকে আবার ডাকা হলে তিনি গাজায় যেতে রাজি হয়েছিলেন বলে জানায় তার পরিবার। কিন্তু সেখানে যাওয়ার দুই দিন আগেই তিনি আত্মহত্যা করেন।
ছেলের স্মৃতি হিসেবে এলিরানের ব্যবহৃত জিনিসপত্র আগলে রেখেছেন মা জেনি। এসবের ভেতর এলিরান মাথায় গুলি করার সময় যে ক্যাপটি পরা ছিল সেটাও রয়েছে। ক্যাপের গায়ে এখনো বুলেটের ছিদ্র স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।
গাজা থেকে ফেরার পর শুধু এলিরানই নন, ইসরায়েলের আরও অনেক সেনা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনীর তথ্যের বরাতে দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হারেৎজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১১ মে পর্যন্ত ১০ জন ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন।
ইসরায়েলি বাহিনীর একজন কমান্ডার ও মনোবিজ্ঞানী উজি বেচোরের কাছে সেনাসদস্যদের আত্মহত্যার সংখ্যার বিষয়ে জানতে চেয়েছিল সিএনএন। তিনি বলেন, ৫-৬ বছর ধরে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীতে আত্মহত্যার হার কমবেশি স্থিতিশীল রয়েছে। বলতে গেলে ১০ বছর ধরে সংখ্যাটা কমছে। তবে সংখ্যাটা সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করেননি এই মনোবিজ্ঞানী।
গাজাফেরত এক-তৃতীয়াংশ সেনাই মানসিক সমস্যায়
গাজা যুদ্ধ থেকে ফেরা এক-তৃতীয়াংশ ইসরায়েলি সেনাই মানসিক স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছেন। গত আগস্টে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতি মাসে এক হাজারের বেশি আহত সেনাসদস্যকে চিকিৎসার জন্য ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তাদের ৩৫ শতাংশ নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অভিযোগ করেছেন। তবে এই সেনাদের ২৭ শতাংশের অবস্থা উন্নতির দিকে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ১৪ হাজার ইসরায়েলি সেনাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হবেন।
ইসরায়েলে বছরে পাঁচ শতাধিক মানুষ আত্মহত্যা করেন। এ ছাড়া ছয় হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য। আর সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ইসরায়েলি সেনাদের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ ছিল আত্মহত্যা। সে বছরেই অন্তত ১১ জন সেনা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
গাজা যুদ্ধ চলাকালে সেনাসদস্যদের আত্মহত্যা-সংক্রান্ত ‘গুজব’ রুখতে চলতি বছরের শুরুর দিকে পদক্ষেপ নিয়েছিল ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তখন সেনাসদস্যদের আত্মহত্যাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেছিল তারা। বলেছিল, আগের বছরের তুলনায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে আত্মহত্যার সংখ্যা কমেছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর বেশিরভাগ ইসরায়েলি গাজায় যুদ্ধকে সমর্থন করেছিল এবং হামাসের নিকট জিম্মিদের মুক্তির জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিল। কিন্তু হামলার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে, ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। মাত্র ৬% ইসরায়েলি মনে করেন যে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া উচিত। বাকিরা গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। কারণ তারা মনে করেন যুদ্ধের চেয়ে মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। এদের মধ্যে যারা সেনা হিসেবে গাজার ভয়াবহতা দেখে এসেছেন তারা এই যুদ্ধ বন্ধের জন্য আকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন।
এলিরানও গাজার ভয়াবহতা দেখে ফিরে আসার পর প্রায়ই তার পরিবারকে বলতেন যে তার মনে হয় তার শরীর থেকে ‘অদৃশ্য রক্ত’ বের হচ্ছে।
এলিরানের আত্মহত্যার জন্য গাজা যুদ্ধকেই দায়ী করছেন তার বোন শির। ভাইয়ের মানসিক যন্ত্রণার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সেনাাহিনীর কারণে, এই যুদ্ধের কারণে, আমার ভাই আর আমাদের মাঝে নেই। সে হয়তো যুদ্ধে গুলিতে বা আরপিজির (রকেট প্রপেলড গ্রেনেড) আঘাতে মারা যায়নি, তবে অদৃশ্য এক গুলি তার জীবন কেড়ে নিয়েছে।’
Leave a Reply