নিজস্ব প্রতিবেদক:
ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স, একাধিক বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি ক্রয় ও দুই মেয়েকে কানাডায় পড়াশোনা করানোর অভিযোগ উঠেছে এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী কে. এম নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নিজেকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমুর ভাতিজা বলে পরিচয়দানকারী এই কর্মকর্তা দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। রাজধানী ঢাকাসহ নিজ গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলা সদরে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। এছাড়া লায়লা নামের গার্লফ্রেন্ডের নামেও কিনেছেন একটি আধুনিক ফ্ল্যাট!
সূত্র জানায়, নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান নুরুল ইসলাম ডিপ্লোমা পাশ করে চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই বেপরোয়া জীবনযাপনে ব্যস্ত হয়ে পরেন। চাকরির শুরু থেকেই তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করে ওইসব কাজে বিল দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।
সরকারি কর্মকর্তা হয়েও এভাবে অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ বানিজ্য, টেন্ডার বানিজ্য, বদলি বাণিজ্য, ঘুষ বানিজ্য, কর ফাঁকিসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বড় ভাই ও শ্যালকের নামে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
গুরুত্বপূর্ণ নগর উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপটে ওই প্রকল্পের সব কর্মকর্তা কর্মচারীরা তার ভয়ে তটস্থ থাকত। তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেহ মুখ খোলার সাহস পেত না।
ওই প্রকল্পে থাকা অবস্থায় কোন কোন পৌরসভায় কাজ না করেও চূড়ান্ত বিল অনুমোদন দিয়ে বরাদ্দের ৭০ ভাগ টাকা নুরুল ইসলাম নিয়ে নিতেন। আর এ ভাবে কাজ না করে প্রায় শত কোটি টাকা নিজের পকেটস্থ করতেন।
ওই সময় তার এহেন অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা জানতে পেরে প্রকল্প পরিচালক নোট দিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট তাকে বদলির সুপারিশ করেন। পিডির সুপারিশমতে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ তাকে পটুয়াখালীতে বদলি করেন।
সূত্র মতে, কে. এম নুরুল ইসলামের নিজ জেলা ঝালকাঠিতে কিনেছে প্রায় ৩০ বিঘা জমি।
তার স্ত্রীর নামে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে একটি ব্রোকারেজ হাউজ করেছেন যার নাম আর. এন ট্রেডিং লিমিটেড, যার আইডি নং ৬০৪৫৭।
৪৪/১/৪, আজিমপুর দায়রা শরীফ রোডে একটি বাড়ি। এখানে বসবাস করে এবং অন্য দুটি ফ্ল্যাট ভাড়া বাবদ সেখানে থেকে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করেন।
তার দুই মেয়ে মেয়ে পড়াশোনা করেন অস্ট্রেলিয়ায়। মেয়েদের জন্য সেখানে একটি আধুনিক ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন কে. এম নূরুল ইসলাম।
ঢাকার অদূরে সাভারের রাজাশন এলাকায় দশ কাঠা জমির ওপর টিন শেড বাড়ি তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন। এখান থেকে প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ লক্ষাধিক টাকা আয় করেন।
আগারগাঁও কর্নেল গলিতে তছলিম গার্ডেন ভবনে গার্লফ্রেন্ড লায়লার নামে ফ্ল্যাট (৫ জি) কিনেছেন । এটি তার বেনামি সম্পদ। লায়লা সেখানে বসবাস করেন আর নূরুল ইসলাম প্রায়ই ওই ফ্ল্যাটে যাতায়াত করেন।
কে. এম নুরুল ইসলামের রয়েছে একটি টয়োটা সেল্যুন গাড়ি (মডেল ২০১০ এবং নাম্বার ঢাকা- মেট্রো-ঘ ৩৫০৫৮০) ।
পদ্মা ব্যাংকে কর্মরত তার শ্যালক আহসান উল্লাহ খান এর নামে ২০ (বিশ) কোটি টাকা মূল্য মানের একটি সিএনজি ও পেট্রোল পাম্প করেছেন এই কে. এম নূরুল ইসলাম।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, কে. এম নূরুল ইসলাম নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) যোগদানের পর তার কপাল খুলে যায়। এলজিইডির অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প এটি। ওই প্রকল্পের পিডি কাজী মিজানুর রহমানের সাথে ছিল তার দহরম মহরম সম্পর্ক। তার সুবাদেই ওই প্রকল্পভুক্ত পৌরসভার মেয়রদের সাথে পিডির পক্ষে সকল দর কষাকষি ও ঘুষ লেনদেন করতেন।
প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ওই প্রকল্প ঘুষের অলিখিত রেট ছিল পাঁচ পার্সেন্ট। ঘুষের টাকা নগদে (ক্যাশ) পরিশোধ করলে ওই মেয়রকে বরাদ্দের চিঠি ধরিয়ে দিতেন কে. এম নুরুল ইসলাম। যে মেয়র টাকা বেশি দিতেন, তাকে বরাদ্দের পরিমান বাড়িয়ে দিতেন। এ ক্ষেত্রে ওই প্রকল্পে কাজের মানের বিচার না করে ঘুষের পরিমানের দিকেই বেশি মনোযোগী ছিলেন। টাকার বিনিময়ে সবকিছু জায়েজ করা হতো।
এভাবে পাঁচ পার্সেন্ট হিসাবে কোটি কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন করেছেন কে. এম নুরুল ইসলাম। তার সঙ্গে কাজ করেছেন এমন একাধিক সহকর্মী জানিয়েছেন যে, অনেক সময় মেয়রদের কাছ থেকে ঘুষের টাকা আদায় করে তার সঠিক হিসাব পিডিকে দিতেন না। এছাড়া নতুন প্রকল্প তৈরির জন্য নতুন নতুন পৌরসভা প্রকল্পভুক্ত করার নামে কোটি কোটি টাকা ঘুষ আদায় করে নিতেন।
নূরুল ইসলাম চাকরি জীবনে যেখানে যেখানে পোস্টিংএ ছিল সবখানে অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য বেশি দিন থাকতে পারতেন না।
সহকর্মীদের কাছে রমনীমোহন হিসেবে পরিচিত কে. এম নুরুল ইসলাম। মেয়রদের কাছ থেকে ঘুষের টাকা আনতে নিজেই বিভিন্ন জেলায় সফর করতেন। এসময় গার্লফ্রেন্ড লায়লাকে সাথে নিয়ে যেতেন।
এমন একটি সফরে কে. এম নুরুল ইসলাম গার্লফ্রেন্ড লায়লাকে নিয়ে বগুড়ায় যান ঘুষের টাকা আনতে। তখন হোটেলে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়েন এবং পুলিশকে ঘুষ দিয়ে ছাড়া পান।
অভিযোগকারী তার আবেদনে কে. এম নুরুল ইসলাম দুদক ও এলজিআরডি সচিবের নিকট এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কে. এম নুরুল ইসলামের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
Leave a Reply