নিউজ ডেস্ক, সময় সংবাদ : গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে তরুণদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে বাধা দেয়া তাদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। গোপালগঞ্জে সমাবেশ শেষে ফেরার পথে এনসিপি নেতাদের গাড়িবহরে হামলা ও সহিংসতার ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বুধবার (১৬ জুলাই) অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এই বিবৃতি দেয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মী, পুলিশ এবং গণমাধ্যমের ওপর নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। সহিংস আক্রমণ ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ কর্মীরা এই হামলা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করা হবে।
এতে আরও বলা হয়, সেনাবাহিনী এবং পুলিশের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের প্রশংসা করছি। পাশাপাশি হুমকি সত্ত্বেও সমাবেশ চালিয়ে যাওয়াদের সাহসেরও প্রশংসা করছি।
শেষে বলা হয়, এই সহিংসতায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। বাংলাদেশে সহিংসতার কোনও স্থান নেই। ন্যায়বিচার অবশ্যই জয়ী হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার সমাবেশ শেষে ফেরার পথে এনসিপি নেতাদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় গোপালগঞ্জের পৌরপার্ক এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এরইমধ্যে জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। পাশাপাশি চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ দলটির নেতারা গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনও দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি তাদেরকে পিছু হটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এনসিপি নেতারা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমাদের গাড়িবহরের একটি অংশ মাদারীপুরের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে। তাদের ওপর হামলার আশঙ্কা করছি। গাড়িবহরের একটি অংশ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হামলার কারণে যেতে পারেনি। তাই পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছি।
জানা যায়, গোপালগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রেখেছে হামলাকারীরা। তাতে বিভিন্ন জায়গায় আটকা পড়েছেন এনসিপির নেতারা।
সমাবেশ শুরুর আগে দুপুর দেড়টার দিকে এনসিপির সমাবেশস্থলে হামলা ও ভাঙচুর করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। হামলা চালিয়ে ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে এবং চেয়ার ভাঙচুর করে তারা। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে বলে জানা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের কর্মীরা হঠাৎ করেই মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে হামলা শুরু করে।
এর আগে সকালে সদর উপজেলার গান্ধীয়াশুর এলাকায় ঘোনাপাড়া-টেকেরহাট আঞ্চলিক সড়কে গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ইউএনওর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রকিবুল হাসান।
ইউএনও বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে আজ গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে পদযাত্রা ও পথসভা করার কথা রয়েছে। তাদের কর্মসূচি বানচালের জন্য আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা প্রথমে পুলিশের ওপর হামলা করে, পরে আমার গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে।
তাছাড়া, সকালে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দায়ী করেছে পুলিশ। গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. সাজেদুর রহমান বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির মাসজুড়ে জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে আজ গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে পদযাত্রার কথা রয়েছে তাদের। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমনের কথা রয়েছে। তাদের পদযাত্রা বানচালের জন্য আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকরা সদর উপজেলার গান্ধিয়াশুর এলাকায় ইউএনওর গাড়ি বহরে হামলা ও ভাঙচুর করে।
Leave a Reply