জেহাদ চৌধুরী,ঢাকা:
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) জোন-৮ এর অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আনোয়ার হোসেন আলম এবং একই পদে (অর্থ ও নিরীক্ষা শাখা) কর্মরত ফারহানা সিদ্দিকা দু’জন সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। পদ-পদবীতে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হলেও এই দম্পতি অর্থ-বিত্তে প্রভাবশালী। নগদ অর্থ, বাড়ি-গাড়ি, প্লট-ফ্ল্যাটসহ দু’জনেই অঢেল সম্পদের মালিক। সম্প্রতি এই দম্পতির নামে দুদকে (দুর্নীতি দমন কমিশন) অভিযোগ দিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম নামের জনৈক ব্যক্তি। যার একটি কপি এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, স্থাবর-অস্থাবর সবমিলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকার মালিক আনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী ফারহানা সিদ্দিকা! অথচ জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ি (৯,৩০০-২২,৪৯০) রাজউকের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে তাদের মূল বেতন ১৭,৬০০ টাকা। সে হিসেবে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মাসে গড় আয় ৪০/৪৫ হাজার টাকার বেশি নয়। বর্তমানে সামান্য এই টাকায় সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য। কিন্তু, আনোয়ার-ফারহানা দম্পতি বাড়ি-গাড়ি, প্লট-ফ্ল্যাটসহ অর্থবিত্তে ফুলে ফেঁপে একপ্রকার রাজকীয় জীবন-যাপন করছেন।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ার ও ফারহানার মূল কাজই হচ্ছে- রাজউকের বিভিন্ন বিষয়ে তদবীর করা। কেবলমাত্র তদবীর বাণিজ্য করেই অর্ধশত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তারা। আনোয়ারের কর্মস্থল জোনাল অফিস নারায়ণগঞ্জে (জোন-৮) হলেও অধিকাংশ সময়ই রাজউকের প্রধান কার্যালয় মতিঝিলে স্ত্রী’র সান্নিধ্যে থাকেন তিনি। স্বামী-স্ত্রী দু’জন মিলেমিশে হেড অফিসে বসেই তদবীরসহ বিভিন্ন অপকর্ম করেন। গত আওয়ামীলীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে তদবীর করেই অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তারা।
অভিযোগ মতে, রাজধানীর উত্তর-পশ্চিম যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক রোডে ২টি বিলাশবহুল ফ্ল্যাট, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ১টি বাড়ি, উত্তরা এবং পূর্বাচলে একাধিক প্লট ছাড়াও শশুর বাড়ীর আত্মীয়দের নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন আনোয়ার-ফারহানা। ঢাকা মেট্রো-গ, ২৩-৮১১৪ বিলাসবহুল গাড়িটি আনোয়ারের।
জানা গেছে, ১৬/২ উত্তর-পশ্চিম যাত্রাবাড়ির ওয়াসা রোডে প্রথমে ১টি ফ্ল্যাট কিনলেও পরবর্তীতে ৯ তলা ওই ভবনের প্রায় সবগুলো ফ্ল্যাটই আত্মীয়দের নামে কিনে নেন আনোয়ার-ফারহানা। এছাড়াও উত্তরা ও পূর্বাচলে নামে-বেনামে ৮/৯টি প্লট, নারায়ণগঞ্জে বাড়ি আছে তাদের। প্রতিমাসে শুধুমাত্র গাড়ির পেছনেই ৪০/৫০ হাজার টাকা ব্যয় করেন আনোয়ার-ফারহানা, যা তাদের দু’জনের বেতনের সমতুল্য।
আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে গুলশান এস্টেটের ফাইল গায়েবে জড়িত থাকার কথাও জানায় অপর একটি সূত্র।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের এক কর্মচারি গণমাধ্যমকে বলেন, গত ১২ মার্চ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিলে হিসাব খোলার আবেদন করেন ফারহানা সিদ্দিকা। আবেদন ফরমে প্রতিমাসে ২ হাজার টাকা হিসেবে চাঁদার হার ১১.৫০% এবং টাকা জাতীয় বেতন স্কেল’১৫/গ্রেড-১৬ অনুযায়ি তিনি তার মূল বেতন ১৭,৬০০ টাকা উল্লেখ করেছেন। এর ঠিক দুইমাস আগে গত ২৯ জানুয়ারি বিদেশ ভ্রমণের জন্য ২২ দিনের ছুটি চেয়ে রাজউক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন ফারহানা। ২২ দিন সম্পুর্ণ নিজ খরচে দুবাই ভ্রমণ এবং পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব যাবেন বলে আবেদনে উল্লেখ করেছেন ফারহানা।
ওই কর্মচারি আরও বলেন, ‘কত টাকার মালিক হলে সৌদি এবং দুবাইয়ের মতো ব্যয়বহুল দেশে ২২ দিন থাকা যায়?’ আনোয়ার-ফারহানা দম্পতি এর আগেও একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে ফারহানা সিদ্দিকার মুঠোফোনে (০১৮৩০৪***৮৩) একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ করে বক্তব্য দেবার অনুরোধ করলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি।
আনোয়ার হোসেন আলমের মুঠোফোন নাম্বারে (০১৭১১৩৬***৫) কল দিয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “১৬/২, যাত্রাবাড়ীতে একটি ফ্ল্যাট, ব্যক্তিগত চলাচলের জন্য একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ, ২৩-৮১১৪) এবং উত্তরায় সাড়ে তিন কাঠার একটি ফসলি জমি ছাড়া আমাদের আর কিছুই নাই। তিনি বলেন, রাজউকে ২৫ বছর যাবত চাকরি করছি। ২০০৬ সালে পানির দরে সাড়ে তিন কাঠার একটি প্লট এবং ২০১০ সালে ফ্ল্যাটটি কিনেছি। আমার ট্যাক্স ফাইলে সবকিছু উল্লেখ করা আছে।”
স্বামী-স্ত্রী দু’জন মাসে মাত্র ৪০/৫০ হাজার টাকা আয় করে ফ্ল্যাট-প্লটের মালিক, বেতন দিয়ে ড্রাইভার পোষা সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার হোসেন এ প্রতিবেদককে সরাসরি তার সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ জানান।
সূত্র :সময় নিউজ
Leave a Reply