শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
নেতাকর্মীদের ‘কড়া’ নির্দেশনা দিল বিএনপি তারেক রহমান কবে দেশে আসছেন, জানালেন মির্জা ফখরুল ফ্ল্যাট কেলেঙ্কারির পর টিউলিপকে প্রথম প্রকাশ্যে দেখা গেছে! সাভারে বাস ও অ্যাম্বুলেন্স সংঘর্ষ, নিহত ৪ বাড়বে বাইক-ফ্রিজ-এসির দাম লন্ডনে পৌঁছেছেন বেগম খালেদা জিয়া শেখ হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ তিব্বতে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ৫৩ জনের মৃত্যু শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জনগণ ও গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা খালেদা জিয়ার ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারেক রহমানের চার মামলা বাতিলের রায় বহাল শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ও বাংলাদেশের ‘লাইট ট্যাংক’ কেনা প্রসঙ্গে ভারত যা বলছে মাছ ধরার নৌকা থেকে ১ লাখ ইয়াবা জব্দ, আটক ১ চ্যালেঞ্জে দেশের অর্থনীতি প্রধান উপদেষ্টার তহবিল থেকে ৭ লাখ কম্বল পাচ্ছেন শীতার্তরা টানা শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন সবজির বাজারে ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প

চ্যালেঞ্জে দেশের অর্থনীতি

  • সংবাদ প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২৫, ১০.৩২ পিএম
  • ৬৩ বার সংবাদটি পড়া হয়েছে
টাকা ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ছাত্র জনতার বিক্ষোভে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর দায়িত্ব নিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা যখন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তখন দেশের অর্থনীতি অনেকটাই বিপর্যস্ত। ব্যয় মেটাতে সরকার ঋণ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিল।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের লোকদের দুর্নীতির কারণে দ্রব্যমূল্য ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় মানুষের নতুন চাকরির সুযোগ সংকুচিত হয়ে গেছে। এর সঙ্গে ডলার সংকটে টান পড়ে রিজার্ভে। সরকার যে বিদেশ থেকে প্রয়োজন মতো জিনিস কিনবে, সেই সক্ষমতা ন্যূনতম পর্যায়ে চলে এসেছে। আবার বিদেশি ঋণ শোধ করতেও হিমশিম অবস্থা।

বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে শোধ না করায় খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। বেশ কয়েকটি ব্যাংক টাকার অভাবে গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছিল না। সবকিছু বিবেচনায় বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতি গত কয়েকবছর ধরেই নানা সংকটে। কখনও রিজার্ভে ঘাটতি, কখনও জিনিসপত্রের দাম, কখনও কর্মসংস্থান- অর্থনীতির সংকট হাজির হয়েছে নানা চেহারায়।

এদিকে টাকা ছাপিয়েও সবল হচ্ছে না দুর্বল ব্যাংকগুলো। দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে টাকা ছাপানোর যন্ত্র আছে। কিন্তু সরকার চাইলেই ইচ্ছেমতো টাকা ছাপায় না। তাহলে বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়বে। এতে টাকার মূল্য কমে যাবে, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে। বেশি দামে কিনতে হবে জিনিসপত্র। কিন্তু এরপরও নিরেট অর্থনৈতিক নীতির বাইরে গিয়েও সরকার টাকা ছাপিয়ে থাকে। এর আগে, আওয়ামী লীগ সরকার টাকা ছাপিয়ে ব্যয় নির্বাহের চেষ্টা করে। শেষ সময়ে এসেও তারা টাকা ছাপিয়ে ব্যয় নির্বাহের চেষ্টা করেছে।

অর্থ উপদেষ্টা সম্প্রতি বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ৬০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ছাপিয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারও সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে বিভিন্ন ব্যাংককে সহায়তা দিয়েছে, যার মূল কারণ ঐসব ব্যাংকে তারল্য সংকট বা টাকার সংকট।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির ডিস্টিংগুইশড ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মূলত গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে না পারার পরিস্থিতিতে পড়া ৬টি ব্যাংককে বাঁচাতে টাকা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে লেনদেন চালিয়ে নিতে পারলেও অধিকাংশ ব্যাংকই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে পারেনি। ফলে নতুন বছরেও এই সংকট চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে।

তিনি বলেন, এখানে দেখার বিষয় হচ্ছে কিছু কিছু ব্যাংক আছে, যার জন্য এটা আসলে অতখানি তারল্য সংকটের ব্যাপার না। এটা হলো পুঁজির ঘাটতি। দেখা যাচ্ছে তার পুঁজির ঘাটতি অনাদায়ী ঋণের কারণে এমন জায়গায় গিয়েছে যে, সাময়িকভাবে তারল্য দিয়ে এগুলোর সমাধান করা যাবে বলে আমার মনে হয় না।

“এসব ব্যাংকের জন্য আরও অনেক বেশি পুঁজি পুনর্গঠনের প্রয়োজন পড়বে। তাদের যদি পর্যাপ্ত পুঁজির ব্যবস্থা না করা যায় তাহলে কিছুই হবে না। সেই পুঁজিটা এভাবে হতে পারে যে, তাদের যেসব ঋণ আছে সেটা যদি কেউ কিনে নেয়, অথবা তাদের যদি বন্ড ইস্যু করার সুযোগ দেয় অথবা যদি বৈদেশিক বিনিয়োগের মাধ্যমে যদি ব্যাংকগুলোকে আরেকটু শক্তিশালী করা যায় তাহলে সেটা কাজে লাগবে।” কিন্তু প্রশ্ন হলো এর আগেই সরকার যে তারল্য সহায়তা দিয়েছে সেটা কেন ব্যাংকগুলো কাজে লাগাতে পারলো না? এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বরং আরও সহায়তা চাওয়া হচ্ছে ব্যাংকগুলো থেকে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান ড. এইচ মনসুর বলেন, প্রাথমিকভাবে তারা জোর দিয়েছিলেন দুর্বল ব্যাংকগুলো যেন বেঁচে থাকে। এখানে ব্যাংকগুলো থেকে টাকা দেশের বাইরে চলে গেছে ঋণের মাধ্যমে। ‘সরকার স্পন্সরড’ ব্যাংক ডাকাতির মাধ্যমে বেশ কিছু পরিবারকে ঋণগুলো দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে কিছু কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে একশত টাকার মধ্যে নব্বই টাকাই নাই। সেক্ষেত্রে এসব ব্যাংককে কিন্তু বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হবে। সেজন্যই এই সহায়তা দেওয়া জরুরি ছিল। যেন তারা একটু সময় পায়। কিন্তু এরপরও কেন সংকট মেটেনি? এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, কোনও কোনও ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক কিংবা ইউসিবিএলের মতো কিছু ব্যাংক তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠছে অর্থাৎ তারল্য সহায়তা কাজে লাগছে।

তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের কথা যদি ধরেন, গত চার মাসে তাদের বিভিন্ন গ্রাহক টাকা তুলে নেয়ার পরও ব্যাংকটি সাত হাজার কোটি টাকা টাকা নেট ডিপোজিট মোবিলাইজ করতে পেরেছে। এর বাইরেও কিছু কিছু ব্যাংক এই সমস্যাটা ওভারকাম করার চেষ্টা করছে। এরপরও যদি তারা বাঁচতে না পারে তাহলে সরকার তাদের অধিগ্রহণ করবে অথবা ভিন্ন কোনও ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু গ্রাহকদের ভয় পাবার কিছু নেই।

টাকা ছাপানোয় মূল্যস্ফীতি কি নিয়ন্ত্রণে থাকবে?

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ পৌনে তিন লাখ কোটি টাকারও বেশি। ব্যাংকগুলো যে ঋণ বিতরণ করেছে তার ১৭ শতাংশই খেলাপি হয়েছে। অর্থাৎ এসব ঋণ ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু কোনও কোনও ব্যাংকের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রভাবশালীরা এসব ব্যাংক থেকে মোট পুঁজির আশি থেকে নব্বই শতাংশ টাকাই ঋণ হিসেবে বের করে নিয়েছেন। ফলে ব্যাংকগুলোতে আমানত রাখা টাকা গ্রাহকরা ফেরত পাচ্ছেন না।

সরকার টাকা ছাপিয়ে আপাতত ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইলেও এটা আবার নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে আগে থেকেই বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে। আইএমএফ গত ডিসেম্বরে এক হিসাবে জানিয়েছে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি এখন ১১ শতাংশের কাছাকাছি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আশাবাদী মূল্যস্ফীতি বাড়বে না বরং কমে আসবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আমাদের মূল্যস্ফীতি কমবে। আশা করি এটা আগামী জুন মাসের মধ্যে সাত শতাংশে নেমে আসবে। আর ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এটা পাঁচ শতাংশে নেমে আসবে।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য দুটো বিষয়ে কাজ করা জরুরি। একটা হচ্ছে, ডিমান্ড বা চাহিদা। আরেকটা হচ্ছে সাপ্লাই বা যোগান। ডিমান্ড সাইডে আমরা যেটা করছি সেটা হচ্ছে, সরকারের কিছু ব্যয় কাটছাঁট করে সরকারের যে ঋণ নেয়ার প্রবণতা সেটা কমিয়ে আনছি অর্থাৎ অর্থনীতিতে চাহিদাকে সংকুচিত করছি। আবার মুদ্রানীতির ক্ষেত্রেও আমরা সুদের হার বাড়িয়ে ব্যক্তি খাতে ঋণের প্রবাহ ধীর করে দিয়ে চাহিদা কমিয়ে আনছি। এতে যেটা হবে যে আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে যে ঘাটতি সেটা কমে আসবে, মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে।

একদিকে চাকরি হারাচ্ছেন শ্রমিক, অপরদিকে সংকুচিত হচ্ছে কর্মসংস্থান

বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় সরকার তার খরচ কমিয়ে এবং ব্যক্তিখাতে ঋণ সংকুচিত করে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলানোর নীতি নিয়েছে। কিন্তু এর ফলে বড় বড় প্রকল্প বন্ধ হয়ে কিংবা কাটছাঁট হয়ে এবং ব্যক্তি উদ্যোগে বিনিয়োগ কমে গিয়ে কাজ হারাচ্ছেন অনেকেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পালিয়ে যাওয়া সাবেক সরকারি দলের নেতাদের মালিকানায় থাকা কারখানা কিংবা শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার সংকট। বন্ধ হওয়া এসব কারখানার হাজার হাজার শ্রমিকের কী হবে সেটা অনিশ্চিত। ফলে অর্থনীতির তৃতীয় যে চ্যালেঞ্জটি নতুন বছরেও বড় হয়ে উঠছে সেটা হচ্ছে কর্মসংস্থান।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি বলেন, যেসব বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়েছে সরকারকেই সেগুলো চালিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে কর্মসংস্থানের চিত্র আরও খারাপ হবে। তিনি বলেন, সরকার ঘনিষ্ঠ সবাই তো আর টাকা বিদেশে নেয়নি। অনেকেই দেশেও বিনিয়োগ করেছেন। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে এসব বিনিয়োগের ব্যাপারে জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কিন্তু যেহেতু বিনিয়োগ হয়েছে এগুলো সরকারি ব্যবস্থানায় অন্তত বেশ কিছুদিন চালিয়ে নেয়া প্রয়োজন বিশেষত যেগুলো ভালো প্রতিষ্ঠান। যেন কর্মসংস্থানের জন্য ভুল বার্তা না যায়।

তিনি বলেন, নতুন কর্মসংস্থান তো তৈরি করতে হবে। পুরনো কর্মসংস্থানও যেন ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে সেটা মাথায় রাখতে হবে। এর পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগও দরকার হবে। কারণ বিনিয়োগ হলে কাজ সৃষ্টি হয়। মানুষ কাজ পায়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ কি বাড়বে?

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ নিম্নমুখী। বিদেশি বিনিয়োগ আসলে দেশে ডলার পাওয়া যায়, কর্মসংস্থান তৈরি হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আগের বছরের তুলনায় ৮.৮ শতাংশ কমে গেছে। বিনিয়োগ যে বাড়ছে না কিংবা স্থবির হয়ে আছে সেটাকে খারাপ লক্ষণ হিসেবেই বিবেচনা করেন অর্থনীতিবিদরা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

অন্যান্য সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

January 2024
T F S S M T W
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
All rights reserved © somoysangbad.net
Theme Download From CreativeNews