নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম তুলনামূলক কম। এতে কাঁচাবাজারে আসা ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি দেখা গেছে। তবে সে স্বস্তি হারিয়ে যাচ্ছে এক-দুই সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকা মাছ ও মুরগির দামের। অপরদিকে মাসখানেক আগেই মাঠ থেকে উঠেছে আমন ধান, থেমে নেই চাল আমদানিও। এরপরও বাড়ছে চালের দাম।
শুক্রবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মতিঝিল, হাতিরপুল, কারওয়ান বাজারসহ অন্যান্য বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ক্রেতারা বলছেন, লাফিয়ে বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম। গত দুই সপ্তাহে কোনো কোনো চাল কেজিতেই বেড়েছে ১০ টাকা।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, ধানের দাম বাড়ার ছুতা তুলে চালের দর বাড়াচ্ছেন মিলাররা। এভাবে অযাচিত দাম বাড়ার কারণে বিপাকে ক্রেতারা।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মিনিকেট ও নাজিরশাইলের। খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি করছেন ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। আর নাজিরশাইল বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ৮৬ টাকায়। ১৫ দিন আগেও মিনিকেট চাল ৬৮ থেকে ৭৫ টাকায় এবং নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৭৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে দুই জাতের চালের কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।
বিআর-২৮ জাতের চালের কেজি দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। ২ থেকে ৫ টাকা দর বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। এছাড়া এ সময় মোটা চাল (গুটি স্বর্ণা) কেজিতে বেড়েছে ৫-৬ টাকার মতো। ১৫ দিন আগে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মোটা চাল কিনতে এখন ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৫৬ টাকা। বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা চালের সরবরাহও দেখা গেছে। মিনিকেট জাতের এ চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৬ থেকে ৭৮ টাকায়।
নাখালপাড়ার মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. হেলাল বলেন, এখন আমনের মৌসুম। ভারত থেকেও চাল আসছে। তবু বাজার চড়া। কোনো কারণ ছাড়াই মিলাররা দর বাড়াচ্ছেন।
মুক্তা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. শাহাজান মিয়া বলেন, ধানের দাম বাড়ছে এমন অজুহাতে মিলাররা চালের বাজার গরম করছেন। আসলে ধানের দর বাড়ছে কিনা জানি না।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফুলকপি প্রতি পিস বিক্রি হয় ২০ থেকে ৩০ টাকায়। এছাড়া শিম ৪০ থেকে ৬০, বাধাকপি ২৫, মেটে আলু ৬০, পেঁয়াজের কলি ৪০, ওলকপি ৩০, ব্রুকলি ৭০, গাজর, মানকচু ৫০, মিষ্টি আলু ৮০, টমেটো ৮০ থেকে ১০০, ক্যাপসিকাম ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
বেগুন ৪০ থেকে ৬০, ঢেড়স ৫০ থেকে ৬০, কচুর লতি ৬০, মিষ্টি কুমড়া, পটল ৫০, লাউ ৩০ থেকে ৪০, বরবটি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা ৬০, কাঁচকলা, পেঁপে ৪০, শসা ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে।
বাজারে নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। পুরনো পেঁয়াজ ৭০ টাকা। নতুন আলু ৫০ টাকা। পুরনো আলু ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়।
বর্তমানে ব্রয়লার দাম থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজি দরে। গরুর মাংস আগের মতোই ৭০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারেও বেশ অস্থিরতা রয়েছে। প্রতি কেজি বড় রুই ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, ছোট ও মাঝারি রুই ৩০০ টাকা কিছু কম-বেশি, কাতল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের শিং ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা এবং তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা, এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।
সপ্তাহের মধ্যে কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এক কেজি ওজনের ইলিশ এখন বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ টাকায়। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩২০০ টাকা, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২ হাজার টাকা, ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৪০০ টাকা এবং ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ৮০০-১০০০ টাকার মধ্যে উঠছে।
Leave a Reply