নিউজ ডেস্ক, সময় সংবাদ : বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত সোমবার (৭ জুলাই) বিকেল থেকে বাঁধটির প্রায় ২৫০ মিটার অংশ নদীতে ধসে পড়ে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীর পাড়ের ৬০০ পরিবার। কেউ কেউ ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে হুমকিতে পড়বে আশপাশের রাস্তা, হাটবাজার ও শতাধিক বসতবাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন বলেছে, পূর্ব সতর্কতায় ঘরবাড়ি হারানো পরিবারগুলোকে দেওয়া হচ্ছে সহায়তা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে শরীয়তপুরের জাজিরার আলম খারকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি ও ওছিম উদ্দিন মুন্সিকান্দি গ্রামের অন্তত ৬০০ পরিবার। গতবারের ধসে পড়া বাঁধের মেরামতকৃত ১০০ মিটার-সহ নতুন করে আরও আড়াইশো মিটার এলাকা নদীগর্ভে চলে গেছে। গত সোমবার মাত্র এক ঘণ্টায় ভেঙে পড়ে ২০০ মিটার বাঁধ, বিলীন হয় অন্তত ১০টি ঘরবাড়ি ও ৯টি দোকান। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
শুধু পদ্মা সেতু প্রকল্প নয়, মাঝিরঘাটের বিভিন্ন পাড়াও এখন ভাঙনের সরাসরি ঝুঁকিতে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হাটবাজারসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল হারিয়ে যেতে পারে পদ্মার পেটে। দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে জিওব্যাগ ডাম্পিংয় ও স্থায়ী বেরি বাঁধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছরের নভেম্বরে নাওডোবা এলাকায় ১০০ মিটার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ ধসে যায়, যার পুনর্নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যয় করে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সেই সংস্কার করা এলাকার কিছু অংশসহ গত ৭ জুন দু’টি স্থানে প্রায় ২০০ মিটার বাঁধ পদ্মা নদীতে ধসে পরেছে। এক মাসের ব্যবধানে নতুন করে আরও ২৫০ মিটার এলাকা ধসে পড়ে। এতে বিলীন হয়েছে ৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ১০টি স্থাপনা, সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বসত ঘর।
এছাড়া ভাঙনের হুমকিতে পরেছে শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা-পালেরচর সড়ক, মহর আলী মাদবরকান্দি, আলম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি এবং কালাই মোড়লকান্দি গ্রামের অন্তত ছয় শতাধিক বসত বাড়ি। তাই অনেকেই বাঁধের কাছ থেকে বাড়িঘর ও গাছপালা সরিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া হুমকিতে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মঙ্গল মাঝিরঘাট বাজারের দুই শতাধিক দোকানপাট। তাই আতঙ্কে রয়েছে ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা।
জানা যায়, ২০১০-২০১১ সালে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড’ বাঁধটি নির্মাণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। বাঁধটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা। এখন পুরো বাঁধটি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীর পাড়ের ৬০০ পরিবার।
পাইনপাড়া অছিম উদ্দিন কান্দির ছাত্তার শেখ বলেন, হঠাৎ করে ভাঙন দেখা দিয়েছে, আমরা ঘরবাড়ি নিয়ে যে কোথায় যাব, সেটা এখন অনিশ্চিত। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ রইলো আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন।
অছিমউদ্দিন কান্দির রিনা বেগম বলেন, আমাদের ঘরের পিছনে নদী। পরের জায়গায় থাকি, এখন আতঙ্কে আছি ঘর নিয়ে এখন কোথায় যাব।
মাঝিরঘাট এলাকার সোহারাব, রবিউল, জুয়েল জানান, অবৈধ্য বালু উত্তোলনের কারণে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রুত স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করলে, মাঝিরঘাট এলাকাটি শরীয়তপুরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
ফরিদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শাজাহান সিরাজ ধসে পড়া বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে তিনি জানিয়েছেন, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জিওব্যাগ ফালানো হচ্ছে। দ্রুত ভাঙনরোধে কাজ শুরু করা হবে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় জানিয়েছেন, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে যারা সতর্কতাবশত ঘরবাড়ি সরিয়েছেন, তাদের সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা ২৬ জনকে ৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ ও ঢেউটিন দিয়েছি।
শরীয়তপুরে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদ হোসেন জানান, ভাঙন কবলিত ৩০টি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। জিওব্যাগ ফালানো হচ্ছে। স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
Leave a Reply