সময় সংবাদ ডেস্ক :
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে পর ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে একের পর এক বাংলদেশবিরোধী অপপ্রচার ও মিথ্যাচার ছড়ানো হচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ ও অন্তর্বর্তী সরকার। ভারতীয় মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে এবার দুই বাংলার সনাতন ধর্মের মানুষও ক্ষেপেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বাংলাদেশে সরেজমিন পরিদর্শন করে সত্যতা যাচাই করার জন্য ভারতকে আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা সেই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ওখান থেকেই মনগড়া কল্পকাহিনী বানিয়ে যাচ্ছে।
সেই কল্পকাহিনীর তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে এবিপি আনন্দের একটি খবর। শুক্রবার (৬ নভেম্বর) ভারতীয় ঐ গণমাধ্যমটি শিরোনাম করেছে, হিন্দুদের ওপর অত্যাচারে এবার সরব বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ, ‘প্রচুর মেয়ে নিখোঁজ, বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে…’!
সংবাদটি তাদের ফেসবুকে পেজে শেয়ার করা হয়েছে। সেই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা- ‘মহিলারা শাখা সিঁদুর পরে বেরোতে পারছে না, হিন্দু বুঝে গেলে সমস্যা বাংলাদেশে!’
এই পোস্টটির স্ক্রিনশট ছড়িয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে তা শেয়ার করে উল্টো গণমাধ্যমটির সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বহু মানুষ। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মতে, বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটেনি।
পোস্টটি শেয়ার করে কিংবা এর মন্তব্যের ঘরে যারা এবিপি আনন্দের সমালোচনা করছেন, তাদের বড় অংশ বাংলাদেশি; রয়েছেন ওপার বাংলার মানুষও। সমালোচনাকারীদের মধ্যে মুসলিমদের পাশাপাশি সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও রয়েছেন।
রুদ্র অহম নামে একটি ফেসবুক আইডিতে লেখা হয়েছে- ‘প্রোপাগান্ডা বন্ধ করুন। ভারতের সংখ্যালঘুদের চেয়ে আমরা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা অনেক ভালো আছি।’ এই পোস্টের কমেন্টবক্সে শেয়ার করা হয়েছে এবিপি আনন্দের খবরের লিংকটি।
রুশা সুর নামে একজন এবিপি আনন্দের খবরের ফেসবুক পোস্টটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন- ‘দাদাদের দেশে সবজি খুব সস্তা মনে হয়। তাই তিনবেলাই সেবন করে।’
দেব রায় দীপ্ত নামে একজন একইভাবে খবরের পোস্ট নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করে লিখেছেন- ‘বেশি বেশি হয়ে গেলো…’
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু এবিপি আনন্দের ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট শেয়ার দিয়ে লিখেছেন- “ওগোরে কে বুঝাবে, যে বাংলাদেশে অবিবাহিত মুসলমান মেয়েরাও স্রেফ এস্থেটিক্সের ঠেলায় শাখা-সিঁদূর পরে ঘুরে। ওগোরে কে বুঝাবে, আমি মেঘমল্লার বসু, একটু বাদে জহুরি মহল্লার একটা মাদরাসার ভেন্যুতে মোহাম্মদপুর কমিউনিটি এলায়েন্সের সভায় বক্তব্য দিব। ওদের কে বুঝাবে, গতকাল আলিয়াস ফ্রঁসেতে অনিন্দ্য বিশ্বাস, মুইজ মাহফুজ ছাড়াও ভারতীয় ‘হিন্দু’ অর্জুন করের গান শুনে আসলাম।’
‘কলকাতার মিডিয়া একটা হিন্দু গণহত্যা মেনিফেস্ট করতেসে। মানে, যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা এই আলাপ চালায়েই যাবে।’
তিনি এবিপি আনন্দের পোস্টের নিচে একটি মন্তব্যও করেন, যেখানে লিখেছেন- ‘ছোটবেলায় মা-বাবা মিথ্যা বলতে মানা করেনি?’
শুভ্র গোস্বামী নামের এক উন্নয়নকর্মী পোস্টটির মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘আমিসহ আমার পরিবারের সবাই রোজ শাখা সিঁদুর পরে বের হই। কোথাও কোনো কিছুই হচ্ছে না। এইসব আজাইরা গপ্প বানানো বাদ দেন। বিরক্তিকর হয়ে গেছে এখন বিষয়গুলো। আপনারা এইসব ফালতু নিউজ করে বাংলাদেশি হিন্দুদের আরো ছোট করছেন!’
পশ্চিমবঙ্গের শান্তনু রয় নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এই নিউজ চ্যানেলগুলি নিজেদের টিআরপি বাড়ানোর জন্য দেশে দাঙ্গা লাগায়।’
এবিপি আনন্দের খবরে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতনের’ যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে কোনো ঘটনা বা নির্যাতনের স্পষ্ট কোনো বিবরণ নেই।
কোনো ভুক্তভোগীর অভিযোগ ছাড়া এবং কোনো ঘটনার অভিযোগ করে থাকলেও তেমন কিছু ঘটেছে কি না- এর সত্যতা যাছাই ছাড়া প্রতিবেদন প্রকাশকে বস্তুনিষ্ঠতা ও দায়িত্বশীলতার ঘাটতি হিসেবে মনে করেন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এমন প্রতিবেদন প্রকাশ সংবাদমাধ্যমকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এবিপি আনন্দের যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রকাশিত সংবাদটিতে আনা অভিযোগগুলোর একেকটি তারা তাদের ফেসবুকে পেজে পোস্ট দিচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর। আর মন্তব্যের ঘরে শেয়ার দেওয়া হচ্ছে ওই খবরটিই। একে এজেন্ডাভিত্তিক সাংবাদিকতা বলে মনে করছেন বাংলাদেশের অনেক সংবাদকর্মী। তারা বলছেন, যে কারণে এই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, একই কারণে দেশটির গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা দেখা যাচ্ছে, যেসবের ভিত্তি নেই।
Leave a Reply